লখনউকে ভারতের প্রথম এআই (AI) সিটি হিসাবে গড়ে তোলার জন্য ১০,৭৩২ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হয়েছে, যেখানে ট্র্যাফিক, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপক ব্যবহার করা হবে।
Lacknow Smart City: ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের ভিত্তি এখন আরও মজবুত হতে চলেছে। উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউকে দেশের প্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) সিটি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার একসাথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। India AI Mission-এর অধীনে মার্চ ২০২৪-এ অনুমোদিত ১০,৭৩২ কোটি টাকার বিশাল তহবিল দিয়ে এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এটি কেবল উত্তর প্রদেশকে একটি টেকনোলজি হাব বানাবে না, বরং ভারতের ডিজিটাল রোডম্যাপকেও নতুন দিশা দেবে।
এআই সিটি: ভারতের ডিজিটাল বিপ্লবের পরবর্তী গন্তব্য
এই পরিকল্পনা শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, বরং পুরো ভারতের প্রযুক্তিগত ভবিষ্যৎকে আকার দিতে চলেছে। উত্তর প্রদেশকে দেশের পরবর্তী আইটি হাব বানানোর দিকে এটি একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। লখনউকে ভারতের প্রথম এআই সিটি হিসাবে তৈরি করে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা হবে না, বরং এই উদ্যোগের ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং সুরক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতেও ব্যাপক উন্নতি হবে।
তহবিল কীভাবে ব্যবহার করা হবে?
এই মেগা প্রকল্পের অধীনে নিম্নলিখিত বড় কাজগুলো করা হচ্ছে:
- ১০,০০০ গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটস (GPUs) স্থাপন করা হবে, যা প্রচুর পরিমাণে ডেটা প্রসেসিং এবং এআই মডেল ট্রেনিংয়ের জন্য জরুরি।
- একটি অ্যাডভান্সড এআই ইনোভেশন সেন্টার তৈরি করা হবে, যেখানে স্টার্টআপ, গবেষক এবং ছাত্ররা আধুনিক প্রযুক্তিতে কাজ করার সুযোগ পাবে।
- মাল্টি-মডেল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্য অত্যাধুনিক এআই টুল তৈরি করবে।
এআই নীতি এবং Vision 2047-এর রোডম্যাপ
রাজ্য সরকার শীঘ্রই Vision 2047-কে কেন্দ্রে রেখে একটি ব্যাপক এআই নীতি প্রস্তাব করবে, যা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আইন-শৃঙ্খলা, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শহর উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এআই-এর ব্যবহারিক প্রয়োগকে উৎসাহিত করবে।
স্মার্ট ট্র্যাফিক থেকে জেল নজরদারি পর্যন্ত
লখনউতে একটি এআই-ভিত্তিক ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে, যা রিয়েল-টাইম ডেটা অ্যানালাইসিস, ক্যামেরা নজরদারি এবং অটোমেটিক ট্র্যাফিক সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে ট্র্যাফিকের সমস্যাগুলো দূর করবে। একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলগুলোর নজরদারি, ভিড়-ভাড়াক্কার এলাকাগুলোতে সুরক্ষা এবং শহরের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাও উন্নত করা হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদীয় ক্ষেত্র বারাণসী ইতিমধ্যেই এআই-সক্ষম ট্র্যাফিক সিস্টেমের দিকে এগিয়ে গেছে, যা প্রমাণ করে উত্তর প্রদেশে ডিজিটাল পরিবর্তন দ্রুত ঘটছে।
‘এআই প্রজ্ঞা’ প্রকল্পের অধীনে স্কিলিং বিপ্লব
এআই সিটি প্রকল্পের পাশাপাশি, উত্তর প্রদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত ‘এআই প্রজ্ঞা’ প্রকল্পের অধীনে এ পর্যন্ত ১০ লক্ষেরও বেশি যুবক, গ্রাম প্রধান, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী এবং কৃষকদের এআই, মেশিন লার্নিং, ডেটা সায়েন্স এবং সাইবার সুরক্ষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে Microsoft, Intel, Google এবং Guvi-এর মতো টেক কোম্পানিগুলি অংশীদার। এর মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে যে প্রযুক্তি শুধু শহর এলাকাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে গ্রাম এবং ছোট শহরগুলোতেও এর বিস্তার ঘটে।
স্বাস্থ্য সেবায় এআই-এর ভূমিকা
লখনউয়ের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও স্বাস্থ্য সেবায় এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে। ফতেপুর জেলায় দেশের প্রথম এআই-ভিত্তিক ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেন্টার শুরু হয়েছে, যা মহিলাদের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করছে। এখন লখনউতেও এই ধরণের সেন্টার স্থাপন করা হবে, যার ফলে সাধারণ নাগরিকরা বিশ্বমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবে।
শহুরে উন্নয়নেও আসবে পরিবর্তন
এআই সিটি প্রকল্পের অধীনে স্মার্ট সিটি মডেলকে আরও শক্তিশালী করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে:
- স্মার্ট গভর্নেন্স পোর্টাল, যেখানে নাগরিকদের অভিযোগগুলো এআই দ্বারা ট্র্যাক করা হবে।
- আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য এআই-ভিত্তিক সেন্সর এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম।
- জল এবং শক্তি ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ও রিপোর্টিং।