তুর্কিয়েতে আফগান-পাক শান্তি আলোচনার আগে পাকিস্তানের সামরিক হুমকির জেরে বাড়ল উত্তেজনা

তুর্কিয়েতে আফগান-পাক শান্তি আলোচনার আগে পাকিস্তানের সামরিক হুমকির জেরে বাড়ল উত্তেজনা

তুর্কিয়েতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনার ঠিক আগে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের সামরিক পদক্ষেপের মন্তব্যে উত্তেজনা বেড়েছে। সীমান্ত সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগের মধ্যে আলোচনার সফল ফলাফল এখন অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তান: তুর্কিয়ের রাজধানী ইস্তাম্বুলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হতে চলেছে। তবে এর ঠিক আগেই পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এমন একটি মন্তব্য করেছেন যা পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। খাজা আসিফ তালেবান সরকারকে সতর্ক করেছেন যে, যদি আফগানিস্তান তার ভূখণ্ডে থাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পাকিস্তান নিজেই সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। এই বিবৃতি আলোচনার কয়েক ঘণ্টা আগে দেওয়া হয়েছিল, যার কারণে আলোচনার পরিবেশে প্রভাব পড়েছে।

খাজা আসিফের বিবৃতি

একটি টিভি সাক্ষাৎকারের সময় খাজা আসিফকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে আফগানিস্তানে তালেবানদের মোকাবেলা করার জন্য সামরিক পদক্ষেপই কি একমাত্র বিকল্প। উত্তরে তিনি বলেন, "যুদ্ধ হবে।" এটি একটি সরাসরি সতর্কতা ছিল। আসিফ অভিযোগ করেন যে আফগানিস্তান সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং সীমান্তে সংঘটিত হামলার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না। তার মতে, পাকিস্তানকে তার নিরাপত্তা (National Security) রক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।

সীমান্ত সহিংসতার প্রেক্ষাপট

গত মাসগুলিতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে বেশ কয়েকটি হামলা ও সংঘর্ষ দেখা গেছে। পাকিস্তানের বক্তব্য হলো, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সদস্যরা আফগানিস্তান থেকে প্রবেশ করে হামলা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান সরকার এই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের জন্য একটি নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আফগানিস্তানের জবাব

আফগানিস্তান পাকিস্তানের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কাবুল জানিয়েছে যে পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে নাগরিকদের মৃত্যু হচ্ছে। আফগানিস্তান পাকিস্তানি নীতিকে স্ববিরোধী বলে উল্লেখ করে বলেছে যে পাকিস্তান তাদের সমস্যার দায় কাবুলের উপর চাপাচ্ছে। আফগান সরকার আরও বলেছে যে পাকিস্তান আইএসআইএস (ISIS)-এর সাথে যুক্ত উপাদানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে একটি বড় সমস্যাকে উপেক্ষা করছে।

আলোচনার ভূমিকা

তুর্কিয়ে এবং কাতার এই শান্তি বৈঠকের মধ্যস্থতা করছে। বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত সংঘাত, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা কমানো। আলোচনা থেকে আশা করা হয়েছিল যে উভয় দেশ তাদের সম্পর্ককে একটি স্থিতিশীল দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু খাজা আসিফের মন্তব্যের কারণে বৈঠকের ফলাফল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আঞ্চলিক পরিস্থিতি

আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয়ই এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের পর থেকে এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে। পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে তালেবানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, কিন্তু এখন উভয় দেশের মধ্যে বিশ্বাস হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা (Security Stability) স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ।

Leave a comment