মা: সন্তানের জন্য মায়ের লড়াই, দুর্বল চিত্রনাট্যে হরর-এর স্বাদ

মা: সন্তানের জন্য মায়ের লড়াই, দুর্বল চিত্রনাট্যে হরর-এর স্বাদ
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

যখন নিজের সন্তানের উপর বিপদ আসে, তখন এক মায়ের চণ্ডীরূপ সামনে আসে — এই বিষয়টিকে বলিউড বহুবার পর্দায় দেখিয়েছে। শ্রীদেবীর 'মম' এবং রবীনা ট্যান্ডনের 'মাতৃ' -র মতো ছবিতে মায়ের রিভেঞ্জ ড্রামাকে পেশ করা হয়েছিল।

  • মুভি রিভিউ: মা
  • অভিনেতা: কাজল,রোহিত রায়,ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত,কেরিন শর্মা,বিভা রানী
  • পরিচালক: বিশাল ফুরিয়া
  • শ্রেণী: Hindi,Tamil,Telugu,Bengali, হরর, থ্রিলার
  • সময়কাল: 2 ঘণ্টা 15 মিনিট
  • সমালোচক রেটিং: 2.5/5

বিনোদন: কাজলের নতুন ছবি ‘মা’ আবারও সেই অনুভূতি পর্দায় নিয়ে আসে, যেখানে বলা হয় — যখন সন্তানের উপর আঁচ লাগে, তখন মা চণ্ডীর রূপ ধারণ করেন। শ্রীদেবীর ‘মম’ এবং রবীনা ট্যান্ডনের ‘মাতৃ’-র মতো ছবিতে আমরা দেখেছি যে একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য কতটা দূর যেতে পারে, কিন্তু কাজল-এর ‘মা’ এই থিমটিকে হররের ফ্রেমে পেশ করার চেষ্টা করে।

ছবিটির গল্প কলকাতার কাল্পনিক গ্রাম চন্দরপুর থেকে শুরু হয়, যেখানে মেয়েদের বলি দেওয়ার কুপ্রথা প্রচলিত। ধারণা করা হয়, এখানে জন্ম নেওয়া মেয়েদের দোয়িত্তো (একটি রাক্ষসী শক্তি)-র সামনে বলি দেওয়া হয়। শুভঙ্কর (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) এই প্রথা থেকে বাঁচতে স্ত্রী অম্বিকা (কাজল) এবং মেয়ে শ্বেতা (কেরিন শর্মা)-কে নিয়ে শহরে শান্তির জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে আবার সেই ভয়ঙ্কর গ্রামে টেনে নিয়ে যায়, যখন তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি সম্পত্তি বিক্রি করতে সেখানে ফেরেন।

গ্রামের সরপঞ্চ জয়দেব (রোহিত রায়)-এর সাহায্যে তিনি তাঁর অতীত থেকে মুক্তি পেতে চান, কিন্তু দোয়িত্তোর শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে পারেন না এবং নিজের জীবন হারান। এরপর অম্বিকা তাঁর মেয়ে শ্বেতাকে নিয়ে গ্রামে আসে, যেখানে সে জানতে পারে যে কিশোরীরা হঠাৎ করে নিখোঁজ হচ্ছে, এবং এক কালো শক্তি তাদের শিকার করছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন শ্বেতাও দোয়িত্তোর নিশানায় আসে, এবং অম্বিকাকে তাঁর মেয়েকে বাঁচাতে শেষ সীমা পর্যন্ত যেতে হয়।

গল্পে ভালো আইডিয়া, কিন্তু দুর্বল কারুকার্য

স্ক্রিনপ্লে লেখক সাইভান কোয়াড্রাস রক্তবীজ এবং মা কালীর পৌরাণিক কাহিনী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে একটি আকর্ষণীয় সেটআপ তৈরি করেছেন, কিন্তু চিত্রনাট্য খুবই সাদামাটা ছিল। ছবিটি ভয় দেখাতেও ব্যর্থ হয়, যেখানে বিষয়টিতে যথেষ্ট সুযোগ ছিল। পরিচালক বিশাল ফুরিয়ার কাজও কিছুটা পুনরাবৃত্তিমূলক মনে হয়, কারণ তিনি আগে ‘ছোরি’-র মতো ছবিতে যে ভয় তৈরি করেছিলেন, সেই নতুনত্ব এখানে অনুপস্থিত।

‘মা’-তে জঙ্গলের দৃশ্য, ভুতুড়ে শব্দ এবং বলির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু গা-ছমছম করা দৃশ্যের অভাব অনুভূত হয়। ক্লাইম্যাক্সও বেশ অনুমানযোগ্য হয়ে উঠেছে।

কাজলের শক্তিশালী অভিনয়, রোহিত রায় বাজিমাত

একজন মা হিসেবে কাজল অসাধারণ চেষ্টা করেছেন। ছবিতে বেশিরভাগ চাপ তাঁর কাঁধে, এবং তিনি তাঁর চোখ ও অভিব্যক্তি দিয়ে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তবে সত্যি বলতে, রোহিত রায় বাজিমাত করেছেন। জয়দেবের মতো বহুরূপী চরিত্রে তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, সংলাপ বলার ধরন এবং খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় খুবই শক্তিশালী।

শ্বেতার চরিত্রে কেরিন শর্মা কিছুটা দুর্বল প্রমাণিত হয়েছেন। তাঁর অভিনয় কোথাও কোথাও আরোপিত মনে হয়। ছোট ছোট চরিত্রে বিভা রানী (গাইডের ভূমিকায়) এবং দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য (সেবকের ভূমিকায়) ভালো কাজ করেছেন এবং নিজেদের ছাপ রেখেছেন।

প্রযুক্তিগত দিক গড়পড়তা

ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফি (পুষ্কর সিং) এবং প্রোডাকশন ডিজাইন (শীতল দুগ্গাল) গল্পটিকে দৃশ্যমানভাবে বাস্তবসম্মত করতে বেশ চেষ্টা করেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট, কালী মন্দির, জঙ্গলের পরিবেশ বাস্তবিক লাগে। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ততটা প্রভাবশালী ছিল না, যতটা একটি হরর ছবিতে হওয়া উচিত ছিল। গানের কথা বললে, সেগুলি মনে থাকে না।

‘মা’ একটি ভালো চেষ্টা, যেখানে লিঙ্গবৈষম্য, পৌরাণিক বিশ্বাস এবং মায়ের শক্তিকে একত্রিত করে গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু চিত্রনাট্য এবং পরিচালনার দিক থেকে ছবিটি অসম্পূর্ণ মনে হয়। কাজল এবং রোহিত রায়ের দুর্দান্ত অভিনয় ছবিটিকে বাঁচায়, তবে ভয় দেখাতে এবং মানসিক সংযোগ তৈরি করতে ছবিটি দুর্বল হয়ে যায়।

যদি আপনি কাজল-এর ভক্ত হন, অথবা একজন মায়ের সংগ্রাম এবং তাঁর মাতৃত্বের শক্তিশালী রূপ দেখতে চান, তবে একবার এই ছবিটি দেখতে পারেন, অন্যথায় এই হরর-ড্রামা বিশেষ কিছু মনে থাকবে না।

Leave a comment