মহুয়া দুবরি: গ্রামীণ ঐতিহ্যের ব্রেকফাস্ট, শক্তি আর পুষ্টির ভাণ্ডার

মহুয়া দুবরি: গ্রামীণ ঐতিহ্যের ব্রেকফাস্ট, শক্তি আর পুষ্টির ভাণ্ডার

মহুয়া দুবরি: কোথায় তৈরি হয়, কবে থেকে প্রচলিত, কারা খায়—সব প্রশ্নের উত্তর মেলে মহুয়া দুবরি নামের এই প্রাচীন খাবারে। ছত্রপুর ও বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে আজও গ্রামবাসীরা এপ্রিল মাসে মহুয়া ফুল সংগ্রহ করে ঘরে সংরক্ষণ করেন। বর্ষাকালে সেই মহুয়া দিয়েই তৈরি হয় দুবরি। এতে ছোলা, ময়দা, চিরঞ্জি, মাখনা, কিসমিস, নারকেল গুঁড়োসহ নানা উপকরণ মেশানো হয়। দুধের সঙ্গে খাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী ব্রেকফাস্ট দুর্বল শরীরে প্রাণসঞ্চার করে।

ব্রিটিশ আমলেও টিকে ছিল ঐতিহ্য

ব্রিটিশ শাসনের পর থেকে পাউরুটি, বিস্কুটের মতো বিদেশি জলখাবার জনপ্রিয় হলেও, গ্রামীণ ভারত তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে রেখেছে। মহুয়া দুবরি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি পরিবারে সকালের খাবার হিসেবে চলে আসছে।

মহুয়া ফুল সংগ্রহের সময় ও পদ্ধতি

মার্চ–এপ্রিল মাসে মহুয়া গাছে ছোট হলুদ ফুল ফোটে। ভোরবেলা গ্রামবাসীরা তা সংগ্রহ করে বাড়িতে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। বর্ষার সময় এই শুকনো ফুল দিয়ে রান্না শুরু হয় দুবরি। একবার প্রস্তুত হলে এটি প্রায় বারো মাস ধরে খাওয়া যায়।

পুষ্টি ও স্বাস্থ্যগুণ

আয়ুর্বেদের মতে, মহুয়া শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং দুর্বলতাকে দূর করে। তাই ছোট থেকে বয়স্ক সবাই সমান আগ্রহে এই খাবার খায়। দুধের সঙ্গে খাওয়া হলে শরীর পায় প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন ও এনার্জি। দুর্বল রোগীদেরও এটি খাওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় চিকিৎসকেরা।

রান্নার বিশেষ রেসিপি

ছত্রপুরের এক বাসিন্দা শাফরিন জানিয়েছেন, দুবরি তৈরির জন্য মহুয়ার পাশাপাশি ছোলা, ময়দা, চিরঞ্জি, মাখনা, কিসমিস ও নারকেলের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। চাইলে ড্রাই ফ্রুটসও মেশানো যায়। আশ্চর্যের বিষয়, এতে আলাদা করে চিনি বা গুড় দিতে হয় না। শুকনো মহুয়াই যথেষ্ট মিষ্টি।

তৈরি প্রক্রিয়ার ধাপ

প্রথমে শুকনো মহুয়া গরম জলে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর ফুটন্ত জলে দিয়ে ১–২ ঘণ্টা রান্না করতে হয়। এর মধ্যে ছোলা, ময়দার ছোট বল, চিরঞ্জি, মাখনা, কিসমিস ও নারকেলের গুঁড়ো মেশাতে হয়। ফুটতে ফুটতে এটি সুজির মতো মিষ্ট পদে পরিণত হয়, যা দুধের সঙ্গে খাওয়া হয়।

আজও মহুয়া দুবরি শুধু একটি খাবার নয়, বরং ভারতের গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। পুষ্টি ও স্বাদের নিখুঁত মিশেলে এটি ব্রেকফাস্টের এক অমূল্য রত্ন। আধুনিক খাবারের ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

Leave a comment