মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় এনআইএ আদালত ২০০৮ সালের বিস্ফোরণের সমস্ত ৭ অভিযুক্তকে প্রমাণের অভাবে খালাস করে দিয়েছে, যাদের মধ্যে সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর এবং কর্নেল পুরোহিতও রয়েছেন। এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই রায়কে ন্যায়বিচারের পরিহাস বলে অভিহিত করে তদন্তকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা, সরকারের উদ্দেশ্য এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার না পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মালেগাঁও বোমা বিস্ফোরণ: ৩১ জুলাই ২০২৫, মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন এনআইএ-এর বিশেষ আদালত ২০০৮ সালের বিস্ফোরণের সমস্ত সাত অভিযুক্তকে প্রমাণের অভাবে খালাস করে দেয়। এই রায়ে সবচেয়ে আলোচিত নামগুলির মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত। এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এই বিস্ফোরণে ছয়জন মারা গিয়েছিলেন এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন। এখন যখন আদালত সকলকেই খালাস করে দিয়েছে, তখন এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক—সত্যিই কি কোনও দোষী ছিল না? এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এই রায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং এটিকে 'ন্যায়বিচারের পরিহাস' বলে অভিহিত করেছেন।
সত্যিই কি কোনও দোষী নেই?
আদালত সকল অভিযুক্তকে খালাস করে বলেছে যে তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত এবং জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পারে। কিন্তু ১৭ বছরের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর, যখন ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের পরিবার ন্যায়বিচারের আশা করেছিল, তখন এই ধরনের রায় অনেক প্রশ্ন রেখে গেছে।
ওয়াইসির তীব্র আক্রমণ: 'ন্যায়বিচার নয়, রাজনীতি হয়েছে'
এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ একের পর এক অনেক পোস্ট শেয়ার করে এই সিদ্ধান্তের গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন: 'মোদি সরকার এবং দেবেন্দ্র ফড়নবিস সরকার কি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন, যেমনটি তারা ২০০৬ সালের মুম্বাই ট্রেন বোমা হামলায় খালাস হওয়া ১২ জন মুসলিম অভিযুক্তের বিরুদ্ধে করেছিল?' তিনি আরও জিজ্ঞাসা করেছেন যে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি কি এর উপর কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবে নাকি এই মামলাটিও 'ধর্মীয় রাজনীতি'-র শিকার হবে।
Rohini Salian-এর প্রসঙ্গ: 'এনআইএ বলেছিল নরম হতে'
ওয়াইসি ২০১৬ সালে তৎকালীন বিশেষ সরকারি আইনজীবী রোহিনী সালিয়ানের সেই বক্তব্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে এনআইএ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে 'নরম মনোভাব' নেওয়ার জন্য তার উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই বিবৃতিটি সেই সময় অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল এবং এখন এই রায়ের সাথে আবারও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
তদন্তকারী সংস্থাগুলির উপরও निशाना
ওয়াইসি শুধু রাজনৈতিক দলগুলির উপরই নয়, বরং তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এবং এটিএস-এর কার্যকারিতার উপরও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন যে এই সংস্থাগুলির অবহেলা ও ঢিলেমির কারণে এই মামলা দুর্বল হয়ে গেছে। তিনি লিখেছেন: 'যে সরকার নিজেকে সন্ত্রাসের উপর জিরো টলারেন্স বলে দাবি করে, তারাই একটি সন্ত্রাসী মামলার অভিযুক্তকে সাংসদ বানিয়ে দেয়। এর চেয়ে বড় স্ববিরোধিতা আর কী হতে পারে?'
ক্ষতিগ্রস্তদের কে দেবে জবাব?
ওয়াইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল—'মালেগাঁও-এ নিহত ছয় নিরীহ মানুষকে শেষ পর্যন্ত কে মেরেছিল?' যখন কোনও দোষী পাওয়া যায়নি, তখন বিচার প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার উপর প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন যে এই মামলাটি কেবল একটি বিচারিক ভুল নয়, বরং ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সেই দুর্বলতাগুলিকে তুলে ধরে যেখানে ধর্মীয় ভিত্তিতে বিচারের ভারসাম্য প্রায়শই টলে যায়।
বিরোধী দলের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন
ওয়াইসি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর ওপরও निशाना করেছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন যে তারা এখন কেন চুপ? তিনি বিশেষভাবে কংগ্রেস, এনসিপি এবং শিবসেনা (ইউবিটি)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন যে তারা এই বিষয়ে কোনও পাবলিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন কিনা? নাকি এই মামলাটিও ধর্মনিরপেক্ষতার স্লোগানেই সীমাবদ্ধ থাকবে?