প্রতি পুজো কমিটিকে ১.১০ লক্ষ টাকা অনুদান
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক বিশেষ বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই ঘোষণা করেন, এবছর কলকাতার প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটিকে রাজ্য সরকার ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেবে। এই অর্থ পুজোর খরচ সামলাতে উদ্যোক্তাদের বড় সহায় হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
বিদ্যুৎ বিলে ৮০ শতাংশ ছাড়ের নির্দেশ
সিইএসই ও বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে স্পষ্ট বার্তা পুজোর খরচ কমাতে মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বড় ছাড়ের কথাও ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, রাজ্যের দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে। সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেন তিনি।
৫ অক্টোবর পুজো কার্নিভাল, তার আগে বিসর্জনের দিন ধার্য
২, ৩, ৪ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের দিন উৎসবের রঙ আরও উজ্জ্বল করতে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আগামী ৫ অক্টোবর কলকাতার রাজপথে আয়োজিত হবে দুর্গাপুজো কার্নিভাল। এর আগে তিন দিন— অর্থাৎ ২, ৩ ও ৪ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার কথা জানানো হয়েছে। এতে উৎসব সুষ্ঠুভাবে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে সম্পন্ন করা যাবে বলেই প্রশাসনের আশা।
আদালতের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদের নিশানা
আমার পুজোয় সাহায্য করায় আদালতে যায় কেউ কেউ! ভবিষ্যতে পুজো নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এড়াতেই কি না, সে প্রশ্ন থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোজাসুজি বলেন, “কেউ কেউ আদালতে চলে যায়। বলে আমি নাকি পুজো করতে দিই না! অথচ এখানে ঘরে ঘরে সরস্বতী, লক্ষ্মী পুজো হয়।” তিনি আরও বলেন, ইউনেস্কো আমাদের পুজোকে গ্লোবাল মর্যাদা দিয়েছে। এটা ধরে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পুজো শুধু ধর্ম নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা।
নিরাপত্তা ও নিয়মে জোর মুখ্যমন্ত্রীর
সব পুজো কমিটিকে গাইডলাইন মানার নির্দেশ তিনি পুজো কমিটিগুলিকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব মণ্ডপে ‘সেপারেট এন্ট্রি ও এক্সিট’ রাখুন। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখুন। কোথাও যেন ভিড়ের চাপে স্ট্যাম্পেড না হয়। একটা নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করুন, মেনে চলুন। তিনি বলেন, যে ক্লাব কি পুজো করছে, তাদের থিম, ব্যাবস্থা দেখে নিন। কোন কিছু যেন অব্যবস্থার কারণে বিপদ না ডেকে আনে।
পুজো মানেই অর্থনীতির চাকায় গতি
উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে হাজারো জীবিকামুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, দুর্গাপুজো কেবলমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটা বাঙালির অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। শিল্পী, আলোকসজ্জা কর্মী, প্রতিমাশিল্পী, ব্যবসায়ী— সকলেরই পুজোকে ঘিরে নির্ভরতা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই রাজ্য সরকার এই অর্থ বরাদ্দ এবং বিদ্যুৎ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজনৈতিক বার্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির মিশেল
উৎসবকে ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা, সঙ্গে রাজনৈতিক ইঙ্গিত এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ। একই সঙ্গে প্রশাসনিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির পরিচয়ও দিলেন তিনি। নিরাপত্তা, পরিবেশ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ— সবদিকেই প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।