সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে আরএসএস-এর মন্তব্যে মায়াবতীর কড়া প্রতিক্রিয়া

সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে আরএসএস-এর মন্তব্যে মায়াবতীর কড়া প্রতিক্রিয়া
সর্বশেষ আপডেট: 15 ঘণ্টা আগে

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহ-কার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবোলে কর্তৃক সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে দেওয়া বিবৃতির ওপর রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এবার এই বিষয়ে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র সুপ্রিমো এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীরও প্রতিক্রিয়া সামনে এসেছে।

UP Politics: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর বর্ষীয়ান নেতা দত্তাত্রেয় হোসবোলে কর্তৃক সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে 'সমাজবাদী' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি সরানোর পক্ষে সওয়াল করার পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ইস্যুতে এবার বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র প্রধান এবং উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

মায়াবতী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, ভারতীয় সংবিধানের মূল আত্মাকে প্রস্তাবনায় প্রতিফলিত করা হয়েছে এবং তাতে কোনো প্রকারের পরিবর্তন করা উচিত নয়। তিনি বলেন, সময়ে সময়ে সংবিধানে অনেক অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু প্রস্তাবনায় পরিবর্তন দেশের মূল ভাবনার ওপর আঘাত, যা কোনো অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তনকে বিপজ্জনক বললেন

মায়াবতী বলেন, সংবিধান বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের চিন্তা ও পরিশ্রমের প্রতীক, এবং এতে কোনো প্রকারের পরিবর্তনকে দলিত, পিছিয়ে পড়া এবং গরিব সমাজ কখনো মেনে নেবে না। তাঁর বক্তব্য ছিল, "এগুলো কেবল শব্দ নয়, বরং ভারতীয় গণতন্ত্রের দিক ও দর্শনকে স্থির করে। বিএসপি সুপ্রিমো বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়কেই নিশানা করে বলেন যে, উভয় দলই সংবিধানের প্রতি দ্বিচারিতা দেখিয়েছে। মায়াবতী বলেন, উভয় দলের মনে কিছু এবং মুখে কিছু থাকে, এরা সংবিধানের মূল ভাবনার সঙ্গে খেলা করে।"

ভাষার নামে রাজনীতি নিয়েও আক্রমণ

মায়াবতী সংবিধানের প্রশ্ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভাষা নিয়ে চলা রাজনীতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের অনেক রাজ্যে ভাষার নামে রাজনীতি ঠিক নয়, সমস্ত ভাষাকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। তিনি সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আবেদন করেন যে, তাঁরা যেন ভাষা এবং আঞ্চলিক পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা না করেন।

বিহারের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়েও মায়াবতী নির্বাচন কমিশনের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। তাঁর বক্তব্য ছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকারের সন্দেহ দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক হবে।

সংবিধান বিরোধী চেহারা না বদলালে রাস্তায় নামব - মায়াবতী

মায়াবতী সতর্কতামূলক ভঙ্গিতে বলেন যে, যদি কেউ সংবিধানের প্রস্তাবনার সঙ্গে কোনো প্রকারের পরিবর্তন করার চেষ্টা করে, তবে তাঁর দল চুপ করে বসে থাকবে না। যদি এই সংবিধান বিরোধী চেহারা না বদলায়, তবে আমাদের আসতে হবে, জনগণের আওয়াজ তুলতে হবে, মায়াবতী দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন। এছাড়াও, তিনি মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মায়াবতী বলেন, বাংলার মতো রাজ্যগুলিতে মহিলাদের পরিস্থিতি ভালো নয়, সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা বিপন্ন এবং সরকারগুলি কেবল লোকদেখানো কাজ করছে।

আসলে, আরএসএস-এর সহ-সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবোলে ২৭ জুন দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে 'সমাজবাদী' এবং 'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দ দুটি সরিয়ে দেওয়া উচিত। তাঁর যুক্তি ছিল যে, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করা এই শব্দগুলি কৃত্রিম এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে এদের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। তিনি বলেন যে, এই শব্দগুলির কারণে সংবিধানের প্রকৃত ভাবনায় বিকৃতি এসেছে।

রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়াতে পারে পরিস্থিতি

দত্তাত্রেয় হোসবোলের এই বিবৃতির পর বিরোধী দলগুলি একটি বড় ইস্যু পেয়েছে। বিশেষ করে মায়াবতীর এই কড়া প্রতিক্রিয়ার পর মনে করা হচ্ছে যে, আগামী দিনে সংবিধানের প্রস্তাবনা নিয়ে বিরোধী ঐক্য আরও দৃঢ় হবে এবং আক্রমণাত্মক হতে পারে। মায়াবতীর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বিএসপি এই সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে সারা দেশে তাদের আওয়াজ তুলবে এবং আসন্ন বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনেও এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ইস্যু করতে পারে।

Leave a comment