কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে মীরাবাঈ চানুর স্বর্ণ জয়: ইতিহাস সৃষ্টি

কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে মীরাবাঈ চানুর স্বর্ণ জয়: ইতিহাস সৃষ্টি

ভারতীয় তারকা ভারোত্তোলক এবং টোকিও অলিম্পিকের রৌপ্য পদক জয়ী মীরাবাঈ চানু এক বছরের দীর্ঘ বিরতির পর দারুণভাবে ফিরে এসেছেন। সোমবার অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ স্বর্ণপদক জিতে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

স্পোর্টস নিউজ: ভারতীয় ভারোত্তোলনের তারকা মীরাবাঈ চানু দুর্দান্তভাবে প্রত্যাবর্তন করে আবারও দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এক বছরের দীর্ঘ বিরতির পর তিনি কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতা ও শক্তিশালী পারফরম্যান্সের মাধ্যমে স্বর্ণপদক জয় করেন। টোকিও অলিম্পিকের রৌপ্য পদক জয়ী মীরাবাঈ মহিলাদের ৪৮ কেজি বিভাগে মোট ১৯৩ কেজি (৮৪ কেজি স্ন্যাচ + ১০৯ কেজি ক্লিন অ্যান্ড জার্ক) ওজন তুলে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তিনি চ্যাম্পিয়নশিপে মোট, স্ন্যাচ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্ক—এই তিনটি বিভাগেই রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

চোটের পর মীরাবাঈ চানুর শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন

গত বছর প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এর পর মীরাবাঈকে আর কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেখা যায়নি। সেখানে তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন এবং এরপর চোটের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে মাঠের বাইরে ছিলেন। এই সময়কালে তাঁকে হাঁটু ও পিঠের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে, যার কারণে সেরে উঠতে সময় লেগেছে। চোটের পর এটি ছিল তাঁর প্রথম বড় প্রতিযোগিতা এবং মীরাবাঈ তাঁর অভিজ্ঞতা ও উদ্দীপনার জোরে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। বিশেষ বিষয় হল, তিনি ৪৯ কেজি বিভাগ ছেড়ে এবার ৪৮ কেজি বিভাগে ফিরে এসেছেন, কারণ ৪৯ কেজি এখন অলিম্পিকের অংশ নয়।

স্ন্যাচ রাউন্ডে মীরাবাঈয়ের পারফরম্যান্স ওঠানামা ভরা ছিল। প্রথম প্রচেষ্টায় তিনি ৮৪ কেজি তোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু ভারসাম্য হারানোর কারণে সফল হননি। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একই ওজন তুলে এগিয়ে যান। তৃতীয় প্রচেষ্টায় তিনি ৮৯ কেজি তোলার চেষ্টা করেন, কিন্তু এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তা সত্ত্বেও স্ন্যাচে তাঁর ৮৪ কেজিকে সেরা বলে মনে করা হয়।

ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ধামাকাদার পারফরম্যান্স

ক্লিন অ্যান্ড জার্কে মীরাবাঈ তাঁর শক্তির আসল নমুনা পেশ করেন। তিনি প্রথম প্রচেষ্টায় ১০৫ কেজি তোলেন। এরপর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় এটিকে বাড়িয়ে ১০৯ কেজি পর্যন্ত নিয়ে যান এবং সফল হন। তৃতীয় প্রচেষ্টায় তিনি ১১৩ কেজির লক্ষ্য রাখেন, কিন্তু এটি সফল হয়নি। এইভাবে মীরাবাঈয়ের মোট স্কোর ১৯৩ কেজি হয়, যা এই প্রতিযোগিতায় একটি নতুন রেকর্ড।

মালয়েশিয়ার আইরিন হেনরি মোট ১৬১ কেজি (৭৩ কেজি + ৮৮ কেজি) তুলে রৌপ্য পদক অর্জন করেছেন। ওয়েলসের নিকোল রবার্টস মোট ১৫০ কেজি (৭০ কেজি + ৮০ কেজি) নিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। মীরাবাঈ এই খেলোয়াড়দের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে ফিটনেস ও অভিজ্ঞতার জোরে তিনি এখনও বিশ্বের সেরা ভারোত্তোলকদের মধ্যে অন্যতম।

এটি প্রথমবার নয় যখন মীরাবাঈ ৪৮ কেজি বিভাগে সাফল্য পেয়েছেন। এর আগে তিনি এই বিভাগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব এবং কমনওয়েলথ গেমসে দুটি পদক জিতেছেন। যদিও ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি ৪৯ কেজি বিভাগে প্রতিযোগিতা করছিলেন। এইবার ৪৮ কেজি-তে প্রত্যাবর্তন তাঁর কেরিয়ারের একটি নতুন অধ্যায় এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।

Leave a comment