শনিবার, আর জি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তির দিনে বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে পার্ক স্ট্রিট রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। অভিযোগ, ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, চারিদিকে ধোঁয়া, চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি— যেন রাজনৈতিক প্রতিবাদের মাঝেই যুদ্ধের আবহ।
নির্যাতিতার মায়ের অসুস্থতা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া
বিক্ষোভের উত্তেজনার মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন আর জি কর কাণ্ডে নিহত অভয়ার মা। সোদপুরে বাড়ি ফিরতে অনিচ্ছুক হওয়ায়, তাঁকে ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, শারীরিকভাবে গুরুতর সমস্যা না থাকলেও মানসিক চাপ ও নিরাপত্তা আশঙ্কায় ভর্তি থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে দেখতে যান।
পুলিশি ‘অত্যাচার’-এর অভিযোগ পরিবারের
হাসপাতালের বেড থেকে নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, আমরা তো নিরস্ত্র, তবুও কপালে, পিঠে, রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে। আমি নবান্নে যেতে চাই, তাহলে আমাকে কেন মারা হল? কেন আমার মেয়েকে তার কাজের জায়গায় খুন করা হল? একইসঙ্গে নিহতের বাবার দাবি, এক বছর ধরে পুলিশ আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে, ধর্মতলা থেকে মিছিলে নামতেই আটকানো হয়েছে।
শুভেন্দুর নেতৃত্বে রাস্তায় বসে পড়া বিজেপি বিধায়করা
পুলিশি লাঠিচার্জের পরও পার্ক স্ট্রিট মোড়েই রাস্তায় বসে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল, শঙ্কর ঘোষ, অশোক দিন্দা-সহ একাধিক বিজেপি বিধায়ক। তাঁদের ঘিরে চলতে থাকে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। এই ঘটনার জেরে হাওড়া ময়দান ও সাঁতরাগাছি এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়ায়।
পুলিশের দাবি ও এফআইআর দায়েরের প্রস্তুতি
কলকাতা পুলিশের দাবি, নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়া একাধিক বিক্ষোভকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। ব্যারিকেড ভাঙা, পুলিশকে গালিগালাজ, শারীরিক হেনস্থা ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ইতিমধ্যে সাতটি পৃথক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, প্রয়োজনে সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
শুভেন্দুর বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘বাংলা বনাম মমতার লড়াই’
ঘটনার পর শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, “নির্যাতিতার বাবা-মাকে মারা হয়েছে, বিজেপি বিধায়কদের পেটানো হয়েছে, অন্তত একশো জন আহত। আমাকে পর্যন্ত মারা হয়েছে। এখন থেকে বাংলা বনাম মমতার লড়াই শুরু হয়েছে।” তাঁর এই মন্তব্যে নতুন করে রাজনৈতিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
অন্য সংগঠনের কর্মসূচিও সংঘর্ষে ছাপ ফেলে
শনিবার পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট, পাশাপাশি ‘অভয়া মঞ্চ’-এর কালীঘাট চলো অভিযানে উত্তেজনা ছড়ায়। চিকিৎসক মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, নবান্ন অভিযানে নির্যাতিতার মায়ের আঘাতের জন্য বিরোধী দলনেতাকেই দায়ী করা উচিত। একাধিক কর্মসূচির সংঘর্ষে রাজনৈতিক উত্তাপ শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।