নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সংসদে তরুণদের প্রবেশ, গুলি চলল, ১০ মৃত্যু

নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সংসদে তরুণদের প্রবেশ, গুলি চলল, ১০ মৃত্যু

নেপালে Gen-Z তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সংসদে প্রবেশ করল। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালাল, যার ফলে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু এবং অনেকে আহত হয়েছেন। দেশজুড়ে উত্তেজনা বাড়ল কারফিউ জারির ঘোষণার পর।

সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রতিবাদ: নেপালে সোমবার তরুণ বিক্ষোভকারীরা সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছে। কাঠমান্ডু উপত্যকা এবং অন্যান্য শহরগুলিতে হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নেমে আসে এবং পুলিশের বাধা ভেঙে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করে। এই সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে, কিন্তু উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। গুলিতে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন।

কেন শুরু হলো প্রতিবাদ

নেপাল সরকার ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২৬টি প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, রেডিট এবং X। সরকারের মতে, এই কোম্পানিগুলিকে নেপালে তাদের অফিস খুলতে হবে এবং তাদের কার্যকলাপ নিবন্ধন করতে হবে যাতে দেশে ভুল তথ্য এবং বিশৃঙ্খলা রোধ করা যায়।

সরকার আরও স্পষ্ট করেছে যে কোম্পানিগুলি নেপালে তাদের অফিস স্থাপন না করা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এই পদক্ষেপ তরুণদের মধ্যে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দেয়, কারণ Gen-Z প্রজন্মের অধিকাংশই ডিজিটাল নেটিভ এবং তাদের জীবন সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত।

সংসদ চত্বরে সহিংসতা ও কারফিউ

তরুণরা নিউ বানেশ্বরের ফেডারেল সংসদ চত্বরে হামলা চালায়। প্রথমে তারা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছিল, কিন্তু পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস এবং জল ব্যবহার করে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়।

তিনজন সাংবাদিকও গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে শ্যাম শ্রেষ্ঠ নামের একজন সাংবাদিক রয়েছেন, যার সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। রাত পর্যন্ত কারফিউ জারি ছিল। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে मोर्चा নেয় এবং বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলির বিবৃতি এবং আল্টিমেটাম

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেছেন যে তরুণদের বোঝা উচিত প্রতিবাদের মূল্য কত হতে পারে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা অগ্রাধিকার।

সরকার আরও জানিয়েছে যে কোম্পানিগুলি নেপালে নিবন্ধন না করা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র টিকটক, ভাইবার, নিমবাজ, উইটক এবং পপো লাইভ নিবন্ধন করেছে।

Gen-Z কারা এবং কেন তারা গুরুত্বপূর্ণ

Gen-Z বা জেনারেশন Z হল সেই প্রজন্ম যারা প্রায় ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে। তাদের ডিজিটাল নেটিভ বলা হয় কারণ তারা ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বেড়ে উঠেছে।

Gen-Z প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ এবং ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকে। এই প্রজন্ম মিম, ট্রেন্ডিং চ্যালেঞ্জ এবং ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরিতে আগ্রহী। এছাড়াও Gen-Z তাদের খোলা মন এবং নতুন জিনিস গ্রহণ করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত।

নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদও এই প্রজন্মের ডিজিটাল-সচেতন তরুণরা করেছে। তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে।

Leave a comment