ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আপাতত একটি বড় দুর্নীতির মামলা থেকে স্বস্তি পেয়েছেন। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরে, ইজরায়েলের আদালত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান শুনানি স্থগিত করেছে।
জেরুজালেম: ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জেরুজালেমের জেলা আদালত থেকে দুর্নীতি মামলায় আপাতত বড় স্বস্তি পেয়েছেন। আদালত আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণে স্থগিতাদেশ দিয়ে শুনানি মুলতবি করেছে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এটিকে একটি "রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র" বলে অভিহিত করেছেন এবং নেতানিয়াহুর প্রতি খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন।
আসলে, নেতানিয়াহু গত চার বছর ধরে তিনটি ভিন্ন দুর্নীতির মামলার মোকাবিলা করছেন, যার মধ্যে ঘুষ, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আদালত তাঁর বারবার শুনানির স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল, কিন্তু এর কয়েক দিন পরেই আদালত জাতীয় নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক কারণ উল্লেখ করে আপাতত তাঁকে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
ট্রাম্পের নিশানা
নেতানিয়াহুর এই স্বস্তি পাওয়ার পরে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, "ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর মতো মহান নেতার বিরুদ্ধে যা ঘটছে তা লজ্জাজনক।" তিনি ইরানের পারমাণবিক হুমকি রোধে আমেরিকার সাথে চমৎকার সহযোগিতা করেছেন, তিনি একজন সত্যিকারের যোদ্ধা।" ট্রাম্প ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলাটিকে ষড়যন্ত্র হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেন যে এটি গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টায় বাধা দেবে।
তিনি আরও সতর্ক করেছেন যে আমেরিকা প্রতি বছর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও সহযোগিতায় বিলিয়ন ডলার খরচ করে, এবং তিনি এটা বরদাস্ত করবেন না যে এই ধরনের শুনানি ইসরায়েলের জাতীয় স্বার্থে বাধা সৃষ্টি করবে।
আদালতের যুক্তি: জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার
জেরুজালেমের আদালত তার আদেশে বলেছে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র নীতির উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। আদালত এই ভিত্তিতে শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে। নেতানিয়াহুর আইনজীবীরাও যুক্তি দিয়েছিলেন যে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীকে অনেক আন্তর্জাতিক ফ্রন্টে সক্রিয় থাকতে হবে, বিশেষ করে ইরান ও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে। আদালত এতে সম্মতি জানিয়ে বলেছে যে নেতানিয়াহুকে আপাতত স্বস্তি দেওয়া হোক।
নেতানিয়াহুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
ট্রাম্পের সমর্থনসূচক বক্তব্যের পরে নেতানিয়াহুও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "আরেকবার ধন্যবাদ, ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমরা একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যকে আবারও স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করব।" নেতানিয়াহু আরও যোগ করেছেন যে তিনি ইসরায়েলের জনগণের স্বার্থ এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং শীঘ্রই আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতেও প্রস্তুত থাকবেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো ইসরায়েলের রাজনীতিতে ক্রমাগত অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিরোধী দলগুলো এই বিষয়গুলি নিয়ে বারবার তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। যদিও নেতানিয়াহু নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন এবং অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন।
