দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনে উত্তরসূরীর ঘোষণার সম্ভাবনা, উদ্বিগ্ন চীন

দালাই লামার ৯০তম জন্মদিনে উত্তরসূরীর ঘোষণার সম্ভাবনা, উদ্বিগ্ন চীন

পরের সপ্তাহে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা তাঁর ৯০তম জন্মদিন পালন করতে চলেছেন। এই অনুষ্ঠানটি ৬ই জুলাই হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালাস্থিত ম্যাকলয়েডগঞ্জে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্মশালা: তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা আগামী সপ্তাহে তাঁর ৯০তম জন্মদিন পালন করতে চলেছেন, এবং এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সারা বিশ্বের নজর তাঁর দিকে রয়েছে। বিশেষ করে চীনের দৃষ্টি এই অনুষ্ঠানের উপর নিবদ্ধ, কারণ জল্পনা চলছে যে দালাই লামা এই উপলক্ষে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরীর ঘোষণা করতে পারেন। যদি এমনটা হয়, তাহলে তিব্বতি সম্প্রদায় এবং চীনের মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ধর্মশালাস্থিত নির্বাসিত তিব্বতি প্রশাসন (CTA) জন্মদিনের বিশাল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ২রা জুলাই থেকে ৬ই জুলাই পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এই উৎসবটি কেবল একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান হবে না, বরং তিব্বতি পরিচয় এবং তাদের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি উপলক্ষ হতে পারে।

CTA মন্ত্রীদের ইঙ্গিত

কেন্দ্রীয় তিব্বতি প্রশাসন (CTA)-এর একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা, যেমন নির্বাচক প্রধান পেনপা তসেরিং এবং উপ-সভাপতি ডোলমা তসেরিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ৯০তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে দালাই লামা তাঁর উত্তরসূরীর বিষয়ে বড় ঘোষণা করতে পারেন। এটি কেবল তিব্বতি সম্প্রদায়ে কৌতূহল বাড়িয়েছে তা নয়, চীনের উদ্বেগও গভীর করেছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করে আসছে যে পরবর্তী দালাই লামা তারাই নির্ধারণ করবে, যাতে তিব্বতে তাদের নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় থাকে। কিন্তু দালাই লামা তাঁর বই 'ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস'-এ আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তাঁর পুনর্জন্ম চীনের বাইরে, সম্ভবত ভারতে হবে। তিনি লিখেছিলেন যে নতুন দালাই লামা একটি মুক্ত পরিবেশে জন্ম নিয়ে তিব্বতি ঐতিহ্য এবং বৌদ্ধ ধর্মের সেবা করবেন।

ধর্মশালায় সমবেত হবেন হাজারো অনুসারী

ধর্মশালা এবং বিশেষ করে ম্যাকলয়েডগঞ্জে ২রা জুলাই থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে, যেখানে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার তিব্বতি অনুসারী, বৌদ্ধ ভিক্ষু, ধর্মগুরু এবং সমর্থক উপস্থিত থাকবেন। ৬ই জুলাই দালাই লামার জন্মদিন অত্যন্ত ঐতিহ্যপূর্ণ এবং জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হবে। যদিও তিব্বতি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দালাই লামা ১লা জুলাই-ই ৯০ বছর পূর্ণ করবেন, তবে আন্তর্জাতিক তারিখ অনুযায়ী ৬ই জুলাই তাঁর জন্মদিন পালন করা হবে। এই সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ পূজা, ভাষণ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হবে।

চীনের উদ্বেগ বৃদ্ধি

চীনের উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ হল, যদি দালাই লামা ভারতে বা অন্য কোনো স্বাধীন দেশে তাঁর উত্তরসূরীর ঘোষণা করেন, তাহলে বেইজিংয়ের এই দাবি দুর্বল হয়ে পড়বে যে পরবর্তী দালাই লামা চীনের সম্মতিতে নির্ধারিত হবেন। আসলে, চীন দালাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনে করে এবং তিব্বতকে সম্পূর্ণরূপে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

১৯৫৯ সালে তিব্বতে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর যখন দালাই লামা ভারতে আসেন, তখন থেকেই চীনের সরকার তাঁকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে আসছে। ১৯৮৯ সালে শান্তির প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি আরও বৃদ্ধি পায়। দালাই লামা বহুবার বলেছেন যে তাঁর পুনর্জন্ম কেবল ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ নয়, বরং তিব্বতি পরিচয় রক্ষার একটি উপায়ও বটে। তিনি পুনরাবৃত্তি করেছেন যে তাঁর উত্তরসূরী একটি স্বাধীন পরিবেশে জন্ম নেবেন, যাতে তিব্বতি জনগণের আশা এবং বিশ্বাসের সুরক্ষা করা যায়।

Leave a comment