বিজ্ঞানীদের তৈরি নতুন লেজার অ্যামপ্লিফায়ার: ইন্টারনেটের গতি বাড়বে ১০ গুণ

বিজ্ঞানীদের তৈরি নতুন লেজার অ্যামপ্লিফায়ার: ইন্টারনেটের গতি বাড়বে ১০ গুণ

বিজ্ঞানীরা নতুন লেজার অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করেছেন, যা বর্তমান প্রযুক্তির চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত ডেটা প্রেরণ করতে পারে। এটি ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসা, মাইক্রোস্কোপি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। নতুন প্রযুক্তিতে হাই-ব্যান্ডউইথ এবং মিনিয়েচার চিপ ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: বিজ্ঞানীরা একটি হাই-এফিসিয়েন্সি অপটিক্যাল লেজার অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করেছেন, যা বর্তমান সিস্টেমগুলোর তুলনায় ১০ গুণ দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন করতে পারে। এতে সিলিকন নাইট্রাইড এবং স্পাইরাল-শেপড ওয়েভগাইড ব্যবহার করা হয়েছে, যা সিগন্যাল নয়েজ কমায় এবং ব্যান্ডউইথ ৩০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এই প্রযুক্তি শুধু ইন্টারনেটের জন্য নয়, মেডিকেল ইমেজিং, মাইক্রোস্কোপি এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও বৈপ্লবিক প্রমাণিত হতে পারে।

লেজার অ্যামপ্লিফায়ার কী?

লেজার অ্যামপ্লিফায়ার আলোর রশ্মির তীব্রতা বাড়ায়। টেলিকম নেটওয়ার্কে এটির মাধ্যমেই ইন্টারনেট সিগন্যাল অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষমতা অ্যামপ্লিফায়ারের ব্যান্ডউইথের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ, এটি নির্ধারণ করে যে কত বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ডেটা পাঠানো যেতে পারে।

আজকের সময়ে যখন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট ডিভাইস এবং জেনারেটিভ এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে, ডেটা ট্র্যাফিকও দ্রুত বাড়ছে। Nokia Bell Labs-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ডেটা ট্র্যাফিক দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যান্ডউইথ বাড়ানো এবং দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিশন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

নতুন প্রযুক্তি: হাই-এফিসিয়েন্সি অপটিক্যাল অ্যামপ্লিফায়ার

গবেষকরা এখন একটি নতুন হাই-এফিসিয়েন্সি অপটিক্যাল অ্যামপ্লিফায়ার তৈরি করেছেন। এটির ব্যান্ডউইথ ৩০০ ন্যানোমিটার, যেখানে বর্তমানে ব্যবহৃত সিস্টেমগুলোর ব্যান্ডউইথ কেবল ৩০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এর মানে হল এই নতুন অ্যামপ্লিফায়ার প্রতি সেকেন্ডে ১০ গুণ বেশি ডেটা পাঠাতে পারে।

এই অ্যামপ্লিফায়ারটি সিলিকন নাইট্রাইড দিয়ে তৈরি, যা উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এতে স্পাইরাল-শেপড ওয়েভগাইড ব্যবহার করা হয়েছে, যা লেজার পালসকে দক্ষতার সঙ্গে দিকনির্দেশ করে এবং সিগন্যালে হওয়া গণ্ডগোল কমায়। এই প্রযুক্তির ডিজাইন মিনিয়েচরাইজেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অর্থাৎ অনেক অ্যামপ্লিফায়ার একটি ছোট চিপে লাগানো যেতে পারে।

ফোর-ওয়েভ মিক্সিং প্রযুক্তি বিভিন্ন অপটিক্যাল ফ্রিকোয়েন্সি যোগ করে আউটপুটকে শক্তিশালী করে এবং নয়েজ কমায়।

শুধু ইন্টারনেট নয়, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার

এই নতুন আবিষ্কার শুধু ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে।

  • মেডিকেল ইমেজিং ও ডায়াগনোসিস: দ্রুত এবং নির্ভুল মেডিকেল স্ক্যান সম্ভব হবে।
  • হলোগ্রাফি ও মাইক্রোস্কোপি: উচ্চ মানের ইমেজ।
  • স্পেকট্রোস্কোপি ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ: গবেষণা এবং পরীক্ষায় সাহায্য।

গবেষকদের মতে, সামান্য পরিবর্তন করে এই প্রযুক্তিকে দৃশ্যমান আলো (৪০০–৭০০ nm) এবং বিস্তারিত ইনফ্রারেড (২০০০–৪০০০ nm) রেঞ্জে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রোগের দ্রুত এবং নির্ভুল সনাক্তকরণে সাহায্য মিলতে পারে।

নতুন প্রযুক্তিতে ইন্টারনেট হবে ১০ গুণ দ্রুত

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের গতি বর্তমান সিস্টেমের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হবে। ছোট আকারের এবং সস্তা দামে উপলব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা এটিকে সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে দিতে পারে। ইন্টারনেট ছাড়াও চিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় এর ব্যবহার বৈপ্লবিক প্রমাণিত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রযুক্তির আগমনে ডেটা ট্র্যাফিকের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সমাধান সম্ভব হবে। একই সাথে, হাই-এফিসিয়েন্সি অপটিক্যাল অ্যামপ্লিফায়ার ভবিষ্যতে স্মার্ট শহর, 5G এবং এআই ভিত্তিক নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলতে পারে।

Leave a comment