ভারতে অনলাইন ট্রেডিং প্রতারণা: কীভাবে বাঁচবেন?

ভারতে অনলাইন ট্রেডিং প্রতারণা: কীভাবে বাঁচবেন?

ভারতে অনলাইন ট্রেডিং স্ক্যাম দ্রুত বাড়ছে, যেখানে ভুয়ো অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে মানুষকে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করা হচ্ছে। সেলিব্রিটিদের ছবি এবং নকল রিটার্ন দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করা হয়।

Online Trading: ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই যুগে যেখানে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা কয়েকটি ক্লিকেই সম্ভব, সেখানে সাইবার অপরাধীরা অনলাইন ট্রেডিংকে একটি নতুন প্রতারণার ক্ষেত্র বানিয়েছে। দ্রুত বাড়তে থাকা এই প্রতারণায় প্রতি মাসে হাজার হাজার ভারতীয় তাদের জীবনকালের সঞ্চয় হারাচ্ছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই স্ক্যামগুলোর পদ্ধতি প্রতিবার আলাদা হলেও, তাদের উদ্দেশ্য একই—লোভের মাধ্যমে আপনার টাকা চুরি করা।

অনলাইন ট্রেডিং নাকি অনলাইন ঠगी?

গত কয়েক বছরে ভারতে ডিজিটাল ট্রেডিংয়ের প্রচলন দ্রুত বেড়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সাইবার অপরাধীরা ভুয়ো ট্রেডিং অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষকে বড় লাভের লোভ দেখিয়ে লুঠ করা শুরু করেছে।

কীভাবে ঠগিরা অনলাইন ট্রেডিংয়ের জাল বোনে?

১. ভুয়ো অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট

এরা আসল ট্রেডিং অ্যাপ যেমন Zerodha, Groww বা Upstox-এর হুবহু নকল তৈরি করে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে লগইন করলে আপনাকে নকল পোর্টফোলিও দেখানো হয় যা দ্রুত বাড়ছে। ইউজারকে বিশ্বাস করানো হয় যে তিনি লাভ করেছেন, যেখানে আসলে তার টাকা অন্য কোথাও যাচ্ছে।

২. হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম গ্রুপের ব্যবহার

স্ক্যামাররা ভুয়ো ট্রেডিং কমিউনিটি তৈরি করে এবং লোকেদের যোগ করে। সেখানে ভুয়ো ব্যবহারকারীরা নকল সাফল্যের গল্প শেয়ার করে। আপনার মনে হবে যে সবাই লাভ করছে, যেখানে আসলে তারা সবাই ঠগদের দলের সদস্য।

৩. সেলিব্রিটিদের ছবির অপব্যবহার

শচীন টেন্ডুলকার, রতন টাটা, অক্ষয় কুমারের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়ো প্ল্যাটফর্মগুলোকে বৈধ দেখানো হয়। ব্যবহারকারীরা মনে করেন যে যখন এত বড় নাম যুক্ত হচ্ছে, তখন এই প্ল্যাটফর্মটি নির্ভরযোগ্য হবে।

৪. 100% লাভের প্রলোভন

এই স্ক্যামাররা প্রতিদিন ৫ থেকে ১০% রিটার্নের দাবি করে। কোনো আসল ট্রেডিং কোম্পানি এমন গ্যারান্টি দেয় না, কিন্তু লোভে পড়ে মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে।

মানুষ বার বার কেন ফেঁসে যায়?

  • তথ্যের অভাব: অনেক মানুষের আর্থিক সচেতনতা নেই, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে।
  • তাড়াতাড়ি টাকা কামানোর ইচ্ছা: করোনা মহামারীর পর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়েছে, যে কারণে দ্রুত মুনাফা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে।
  • গ্রুপ ইনফ্লুয়েন্স: যখন গ্রুপের বাকি সদস্যরা মুনাফা দেখাচ্ছে, তখন একজন সাধারণ মানুষও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়।
  • অনলাইন যাচাই না করা: অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় মানুষ রেটিং, রিভিউ বা ডেভেলপার ডিটেইলস দেখে না।

কীভাবে এই অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচবেন?

১. শুধুমাত্র SEBI-রজিস্টার্ড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন

Zerodha, Groww, Upstox-এর মতো কোম্পানি সেবি দ্বারা স্বীকৃত। কোনো নতুন প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ করার আগে তার বৈধতা যাচাই করুন।

২. অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে সতর্ক থাকুন

কেবল Google Play Store বা App Store থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং রেটিং, রিভিউ, ডেভেলপার ডিটেইলস ভালোভাবে পড়ুন।

৩. 100% গ্যারান্টিযুক্ত স্কিম থেকে দূরে থাকুন

বিনিয়োগে লাভ এবং ঝুঁকি দুটোই থাকে। যে প্ল্যাটফর্ম ঝুঁকি ছাড়া গ্যারান্টি দেয়, সেটি স্ক্যাম হতে পারে।

৪. কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না

অচেনা লিঙ্ক বা অ্যাপে PAN, আধার বা ব্যাঙ্ক ডিটেইলস শেয়ার করা খুব বড় বিপদ হতে পারে।

৫. অভিযোগ তৎক্ষণাৎ দাখিল করুন

যদি আপনি কোনো প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ cybercrime.gov.in-এ অভিযোগ করুন বা নিকটবর্তী সাইবার পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করুন।

সরকার এবং প্ল্যাটফর্মগুলোকেও পদক্ষেপ নিতে হবে

সরকারের উচিত এমন ভুয়ো ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরি করা এবং সময়ে সময়ে সচেতনতা অভিযান চালানো। এর পাশাপাশি আসল ট্রেডিং অ্যাপগুলোকেও তাদের ইউজারদের সচেতন করার জন্য ইন-অ্যাপ ওয়ার্নিং এবং শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

Leave a comment