পাকিস্তান ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ এআই (AI) পেশাদার তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে তাদের প্রথম জাতীয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নীতি চালু করেছে। এই নীতির অধীনে একটি এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করা হবে এবং সরকারি পরিষেবাতে এআই যুক্ত করা হবে।
National AI Policy: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এখন শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, এটি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার প্রতীক। এই দৌড়ে পাকিস্তানও তাদের প্রথম National AI Policy 2025 চালু করেছে। আগ্রহের বিষয় হল, ভারতের টিয়ার ২ ও টিয়ার ৩ শহরগুলিতে এআই ল্যাব খোলার এবং দেড় লক্ষ ছাত্রকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণার ঠিক পরেই পাকিস্তানের এই ঘোষণা এসেছে। এখন প্রশ্ন হল — পাকিস্তান কি সত্যিই এই দৌড়ে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে, নাকি এটা শুধু লোক দেখানো?
পাকিস্তান National AI Policy 2025-এ কী আছে?
সম্প্রতি পাকিস্তানের ক্যাবিনেট National Artificial Intelligence Policy 2025-কে অনুমোদন দিয়েছে। এই নীতির উদ্দেশ্য হল দেশে একটি শক্তিশালী এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করা, যা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নয়নই নয়, যুবকদের জন্য নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি করবে। পাকিস্তানের Ministry of Information Technology and Telecommunication (MoITT) এই নীতি তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে এটি পাশ করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি কার্যকর করা হবে।
নীতির প্রধান উদ্দেশ্য
- ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ এআই পেশাদার তৈরি করা।
- ১০০০টি নিজস্ব এআই প্রোডাক্ট তৈরি করা।
- 50,000 এআই-ভিত্তিক সরকারি পরিষেবা প্রকল্প চালু করা।
- প্রতি বছর এআই স্কলারশিপ, বিশেষ করে মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য।
- এআই ইনোভেশন ফান্ড ও ভেঞ্চার ফান্ড স্থাপন করা।
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে 'নতুন চিন্তা'র দাবি
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, 'আমাদের যুবকরাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এআই-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ভবিষ্যতে দেশের শক্তি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।' এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় পাকিস্তান এখন ঐতিহ্যবাহী চিন্তা থেকে সরে এসে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এআই কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে
নীতিটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করার জন্য পাকিস্তান সরকার একটি স্বাধীন 'এআই কাউন্সিল' গঠন করবে। এই কাউন্সিল নীতিগত দিকনির্দেশ তৈরি করবে এবং ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান ও অ্যাকশন ম্যাট্রিক্সের অধীনে নীতির বিভিন্ন দিক বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
এই কাউন্সিলের দায়িত্বগুলির মধ্যে থাকবে:
- আন্তর্জাতিক এআই স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োগ করা
- ডেটা সুরক্ষা এবং সাইবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা
- এআই-এর নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা
- সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা তৈরি করা
ভারত বনাম পাকিস্তান: কে এগিয়ে?
ভারত ২০২৪ সালেই AI Mission India শুরু করেছে, যার অধীনে দেশজুড়ে এআই ল্যাব তৈরি করে ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং স্কিল ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ যুবককে এআই এবং অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করেছে। ভারতে NVIDIA, Google, Microsoft-এর মতো বড় কোম্পানিগুলি সক্রিয়ভাবে এআই গবেষণায় বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে তেমন প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও তেমন জোরালো নয়।
পাকিস্তানের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
- ভৌত অবকাঠামো: পাকিস্তানের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সংযোগের ব্যাপক অভাব রয়েছে।
- ফান্ডিং সমস্যা: বাজেটের একটি বড় অংশ নিরাপত্তা ও ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়। এআই-এর জন্য বড় বিনিয়োগ করা সহজ হবে না।
- দক্ষতার অভাব: বর্তমানে এআই ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত লোকের খুব অভাব।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নীতির ধারাবাহিকতার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ডেটা সুরক্ষা এবং নৈতিক এআই-এর উপর জোর
এআই প্রযুক্তি যত দ্রুত বাড়ছে, ডেটা সুরক্ষা এবং নৈতিকতার দিকে খেয়াল রাখা ততটাই জরুরি হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান সরকারও এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং এই নীতিতে বিশেষভাবে ডেটা প্রাইভেসি, এথিক্যাল এআই এবং সাইবার নিরাপত্তার জন্য নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত করেছে।