সন্তানকে সম্পত্তি দিয়ে যেতে চান না করলে উত্তরাধিকারীরা পড়তে পারেন সমস্যায়

সন্তানকে সম্পত্তি দিয়ে যেতে চান না করলে উত্তরাধিকারীরা পড়তে পারেন সমস্যায়

সম্পত্তি পরিকল্পনায় ট্রাস্টের বাড়তি গুরুত্ব

ভারতে ধনী পরিবারগুলির মধ্যে এখন সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ট্রাস্ট একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। আগে একে শুধু অতি ধনীদের বিষয় মনে করা হত। কিন্তু গোপনীয়তা বজায় রাখা, আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রুত বণ্টন—এই সব কারণে বর্তমানে উচ্চ সম্পদশালীরা ক্রমশ এই পথে হাঁটছেন।ট্রাস্ট ধনী পরিবারগুলির জন্য সম্পত্তি হস্তান্তরের জনপ্রিয় মাধ্যম, যা গোপনীয়তা ও দ্রুত বণ্টনের সুবিধা দেয়।

প্রোবেট প্রক্রিয়া এড়ানোর উপায়

সাধারণত উইল করলে প্রোবেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতের অনুমোদন লাগে। এই প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ এবং পরিবারের বিবাদের আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু সম্পত্তি যদি ট্রাস্টে রাখা হয়, তাহলে আদালতের হস্তক্ষেপ লাগে না এবং গোপনীয়ভাবেই খুব দ্রুত উত্তরাধিকারীদের হাতে সম্পত্তি পৌঁছে যায়।উইলের তুলনায় ট্রাস্টে প্রোবেটের ঝামেলা এড়ানো যায় এবং দ্রুত সম্পত্তি হস্তান্তর সম্ভব হয়।

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলার বড় চিত্র

ভারতে দেওয়ানি মামলার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে হয়। এই কারণে অনেক পরিবারই এখন ট্রাস্টের দিকে ঝুঁকছে। কারণ এতে মৃত্যুর পর কার কোন সম্পত্তি যাবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা যায়, আর ঝগড়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।ভারতে অধিকাংশ দেওয়ানি মামলাই সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার নিয়ে হয়, ট্রাস্ট সেই ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে দেয়।

অপ্রত্যাহারযোগ্য ট্রাস্ট (Irrevocable Trusts)

১৮৮২ সালের ভারতীয় ট্রাস্ট আইনের অধীনে তৈরি এই ধরনের ট্রাস্টে সম্পত্তির ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও কর সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ধনী পরিবারগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্পত্তি রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে।Irrevocable Trust দীর্ঘমেয়াদি সম্পত্তি সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

নির্দিষ্ট ট্রাস্ট (Specific Trusts)

এই ধরনের ট্রাস্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়—কে কবে কত টাকা বা সম্পত্তি পাবে। অনেক পরিবার ব্যবসায়িক সম্পদ রক্ষার জন্যও Specific Trust ব্যবহার করে। পাশাপাশি, এটি ঋণদাতা, মামলা বা বিবাহবিচ্ছেদজনিত দাবির হাত থেকেও পরিবারকে রক্ষা করে।Specific Trust পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা ও সম্পত্তি সুরক্ষায় কার্যকর।

উইলের গুরুত্ব

যদিও ট্রাস্ট জনপ্রিয় হচ্ছে, তবুও উইল বা ইচ্ছাপত্রের গুরুত্ব আজও অটুট। উইল করা তুলনামূলকভাবে সহজ ও সস্তা। এর জন্য রেজিস্ট্রেশনের দরকার নেই এবং ইচ্ছে করলে যেকোনও সময় পরিবর্তন করা যায়। সন্তানদের অভিভাবক নির্ধারণ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ইচ্ছা বা ট্রাস্টের আওতার বাইরে থাকা সম্পত্তির বণ্টন—এসব ক্ষেত্রে উইল অপরিহার্য। তাই অনেক পরিবারই উইল ও ট্রাস্ট—দুটোই ব্যবহার করছে।উইল সহজ, কম খরচে করা যায় এবং ট্রাস্টের পাশাপাশি সম্পত্তি পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাস্টের সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি

ট্রাস্ট তৈরি করতে আইনি খরচ ও স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। অনেক সময় খসড়া সঠিকভাবে না হলে পরিবারে নতুন বিরোধ দেখা দিতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ট্রাস্ট থেকে আয়কে স্রষ্টার ব্যক্তিগত আয় হিসেবে ধরা হয়, ফলে নমনীয়তা কমে যায়। তবে বেশিরভাগ সমস্যাই আদালতের বাইরে গোপনীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়।ট্রাস্ট উপকারী হলেও এর খরচ, আইনি জটিলতা এবং ভুল খসড়ার কারণে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

উপসংহার

সম্পত্তি সন্তানের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে চাইলে কেবল উইল নয়, ট্রাস্টের কথাও ভাবতে হবে। সঠিক আইনি পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনা করলে পরিবার ভবিষ্যতে অপ্রয়োজনীয় মামলা-মোকদ্দমা থেকে রক্ষা পাবে এবং উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্প্রীতিও বজায় থাকবে।ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে উইল ও ট্রাস্ট দুটোই মিলিয়ে সম্পত্তি পরিকল্পনা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

Leave a comment