সোনার ঝলক নয়, মাটি-কাঠ-কাপড়ের টানে শহরজুড়ে হ্যান্ডমেড গয়নার দাপট পুজো মানেই সাজের উৎসব
দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটা বাঙালির সর্বজনীন সাজ-পোশাক আর ফ্যাশনের উৎসবও। শহর কলকাতা থেকে জেলা—সব জায়গাতেই এখন চলছে সাজের তোড়জোড়। জামাকাপড় কেনার পাশাপাশি গয়নাতেও চলছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এ বছর নজর কাড়ছে হাতে বানানো গয়না, যা কম খরচে আলাদা লুক এনে দিচ্ছে সকলকে।
সোনা-রুপোর গয়নায় ভাঁজ ফেলছে দাম
বর্তমান বাজারে সোনা ও রুপোর দামের অগ্নিমূল্যের কারণে সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে সেই গয়নায় হাত দেওয়া দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোনার সামান্য কানের দুল বা গলার হার কিনতেও এখন গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ফলে মানুষের ঝোঁক স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে যাচ্ছে বিকল্পের দিকে—যেখানে স্টাইলও আছে, আবার খরচও কম।
হ্যান্ডমেড গয়নায় ভরছে বাজার
মাটি, কাঠ, কাপড়, শাঁখ কিংবা রঙিন পুঁতির মতো সাধারণ উপকরণ দিয়েই এখন বানানো হচ্ছে নান্দনিক গয়না। নেকলেস, দুল, চুড়ি, আংটি থেকে শুরু করে চুলের অ্যাকসেসরিজ পর্যন্ত সবেতেই মিলছে হাতে বানানো শিল্পের ছোঁয়া। বাজারে নামমাত্র খরচে মিলছে এসব গয়না, যার ফলে জনপ্রিয়তা দিনের পর দিন বাড়ছে।
পুজোর আগে ক্রেতাদের হিড়িক
পুজো আসতে এখনও দেড়-দু’মাস বাকি থাকলেও বাজারে ভিড় জমে গিয়েছে ক্রেতাদের। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও চলছে হ্যান্ডমেড জুয়েলারির বিপুল বিক্রি। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ থেকে শুরু করে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে গিজগিজ করছে ক্রেতা। সুলভ দামের সঙ্গে স্টাইলিশ ডিজাইন মিলেই ক্রেতাদের মন জয় করছে এই গয়নাগুলি।
দাম থেকে ডিজাইন—সবেতেই আকর্ষণ
একটা সাধারণ কাঠ বা মাটির দুল পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫-২০ টাকায়, আবার নকশাদার গলার হার মিলছে কয়েকশো টাকায়। এত কম দামে এত বৈচিত্র্যময় ডিজাইন পেয়ে খুশি ক্রেতারা। বিশেষত, কলেজপড়ুয়া তরুণী থেকে শুরু করে গৃহিণী—সবাই পুজোর কেনাকাটার তালিকায় যুক্ত করেছেন এই হ্যান্ডমেড জুয়েলারি।
প্রতীকী নকশায় ভরপুর গয়না
পুজোর আগে বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে প্রতীকী নকশার গয়নায়। দুর্গা ঠাকুরের প্রতীক, সিংহ, ত্রিশূল কিংবা শঙ্খের মতো মোটিফে সাজানো দুল বা হার একেবারেই অন্য মাত্রা এনে দিচ্ছে সাজে। এগুলি শুধু গয়না নয়, পুজোর আবহকে নিজের শরীরে ধারণ করার এক বিশেষ মাধ্যম হয়ে উঠছে।
গ্রামীণ শিল্পীর হাতে তৈরি সৌন্দর্য
এই হ্যান্ডমেড গয়নাগুলি মূলত তৈরি করছেন বাংলার গ্রামীণ শিল্পীরা। তাঁদের সৃজনশীলতা ও দক্ষ হাতেই গড়ে উঠছে প্রতিটি ডিজাইন। একদিকে শহুরে ক্রেতারা পাচ্ছেন সুলভ দামে ফ্যাশনের নতুন স্বাদ, অন্যদিকে গ্রামীণ শিল্পীরা পাচ্ছেন আয়ের সুযোগ। ফলে এই বাজার শুধু ফ্যাশনের নয়, অর্থনীতিরও নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
চাহিদার শীর্ষে বাজেট-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন
পুজো মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দে নিজের সাজের সঙ্গে আপস করতে চান না কেউ। তবে বাজেটের কথা মাথায় রাখাও জরুরি। হ্যান্ডমেড জুয়েলারি সেই জায়গাতেই হয়ে উঠেছে ‘সেরা বিকল্প’। সস্তা, টেকসই, নান্দনিক এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
হ্যান্ডমেড গয়নার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে এই বাজার আরও বিস্তৃত হবে। সোনা-রুপোর দামের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গয়না। তার জায়গায় মাটি, কাঠ, কাপড় ও শাঁখ দিয়ে তৈরি গয়নারই জয়জয়কার হবে। এ বছর পুজোয় তা চোখে পড়ার মতোই প্রমাণিত হচ্ছে।