পঞ্জাবে বন্যার পর মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সরকারের উদ্যোগে 2303টি প্রভাবিত গ্রামে বিশেষ স্বাস্থ্য অভিযান শুরু। অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবিরে ডাক্তার, নার্স এবং আশা কর্মীরা (ASHA workers) মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন ও ওষুধ দিচ্ছেন।
Punjab Flood: পঞ্জাবে সম্প্রতি হওয়া বন্যার পর রাজ্যের বিভিন্ন অংশে স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার জল নেমে গেলেও, এরপর রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। জল জমে থাকার কারণে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং পেটের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে পঞ্জাব সরকার 14 সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ স্বাস্থ্য অভিযান শুরু করেছে।
এই অভিযানের উদ্দেশ্য হল বন্যা-বিধ্বস্ত মানুষদের কাছে চিকিৎসা সহায়তা, ওষুধ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। অভিযানের অংশ হিসেবে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং আশা কর্মীরা গ্রাম-গঞ্জে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষের সাহায্য করছেন।
অভিযানের পরিধি
এই স্বাস্থ্য অভিযানের অধীনে রাজ্যের 2303টি বন্যা-প্রভাবিত গ্রামে অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবির স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান স্বয়ং এই অভিযানের উপর নজর রাখছেন। সরকারের মূল লক্ষ্য হল 20 সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একবার সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। এছাড়াও, আগামী 21 দিন ধরে ফগিং (fogging) অভিযান চালিয়ে মশা এবং ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
স্বাস্থ্য শিবিরে সুবিধা
প্রতিটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবিরে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং নার্সিং ছাত্ররা একসঙ্গে কাজ করছেন। যে গ্রামগুলিতে হাসপাতাল বা মেডিকেল সেন্টার নেই, সেখানে স্কুল ভবন, পঞ্চায়েত ভবন বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে অস্থায়ী মেডিকেল সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিবিরে রোগীদের পরীক্ষা করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ, ওআরএস (ORS), ডেটল, জ্বরের ওষুধ, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা উপলব্ধ করানো হয়েছে।
বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছাচ্ছে সহায়তা
আশা কর্মী এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা এই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা প্রভাবিত পরিবারগুলির বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন এবং যাদের প্রয়োজন তাদের ওষুধ সরবরাহ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের লক্ষ্য হল, কোনও পরিবার যেন বন্যার পর স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না থাকে।
প্রতিটি গ্রামে আম আদমি পার্টির বিধায়ক এবং দলের জেলা পর্যবেক্ষকরা শিবির পরিচালনার তদারকি করছেন। এই অভিযানে মোট 550টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার পর মশার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এই কারণে সরকার প্রতিটি গ্রামে টানা 21 দিন ধরে ফগিং করার লক্ষ্য রেখেছে।
ফগিংয়ের পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্য দলগুলি যেখানে জল জমে আছে, সেই স্থানগুলি শনাক্ত করে পরিষ্কার করছে। বন্যার পর স্বাস্থ্য সংকট রোধ এবং রোগবিস্তার কমাতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দলীয় নেতাদের ভূমিকা
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেছেন যে স্বাস্থ্য অভিযানে সমস্ত স্তরের প্রতিনিধি, বিধায়ক এবং দলের জেলা পর্যবেক্ষকরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। স্থানীয় মানুষের কাছে পরিষেবাগুলি কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়া তাদের দায়িত্ব। শিবির পরিচালনায় বিধায়ক, মন্ত্রী এবং স্থানীয় নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তারা নিশ্চিত করছেন যে প্রতিটি গ্রাম ও বাড়িতে চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে যায়।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা
এই অভিযানের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল মানুষকে স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন করা। মানুষকে জানানো হচ্ছে যে বন্যার পর পরিচ্ছন্ন জল, স্বাস্থ্যবিধি এবং মশা থেকে সুরক্ষা কতটা জরুরি। আশা কর্মীরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষকে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর লক্ষণ এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সে সম্পর্কে শেখাচ্ছেন।
প্রভাবিত পরিবারগুলির সহায়তা
শিবিরে প্রতিটি রোগীর পরীক্ষা করা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ করা হয়। যে গ্রামগুলিতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলির রোগীদের নিকটতম হাসপাতালে রেফার করা হয়। সরকারের প্রচেষ্টা হল, বন্যা-প্রভাবিত প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং কাউকে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকতে না হয়।