রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একজন বুদ্ধিমান নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে মোদি সবসময় জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন। ডিসেম্বরে তাঁর ভারত সফর উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খোলামেলা প্রশংসা করেছেন এবং তাঁকে একজন বুদ্ধিমান (intelligent) নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পুতিন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রথমে নিজের দেশের কথা ভাবেন এবং এটাই একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের পরিচয়। পুতিনের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন তিনি ডিসেম্বরে ভারত সফরে আসছেন। এই বিবৃতিটি ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের (bilateral relations) ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্বের নিশ্চয়তা
পুতিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, প্রায় ১৫ বছর আগে ভারত ও রাশিয়া একটি "বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব" (special strategic partnership) ঘোষণা করেছিল। তাঁর মতে, এই শব্দগুলোই দুই দেশের সম্পর্ককে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করে। প্রতিরক্ষা (defense), শক্তি (energy), মহাকাশ (space) এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি (science & technology)-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতা গভীর এবং বিশ্বস্ত।
ভারতের অগ্রাধিকার সবসময় জাতীয় স্বার্থ
পুতিন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি এমন একজন নেতা যিনি সবার আগে তাঁর দেশের স্বার্থকে (national interests) গুরুত্ব দেন। তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন যে ভারত কোনো বিদেশি চাপের (foreign pressure) কাছে মাথা নত করবে না এবং তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে (strategic autonomy) বজায় রাখবে। পুতিনের এই বিবৃতি স্পষ্ট করে যে রাশিয়া ভারতের স্বাধীন নীতিকে (independent policy) নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ডিসেম্বরে পুতিনের ভারত সফর
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UNGA) চলাকালীন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছিলেন যে, ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট পুতিন নতুন দিল্লি আসছেন। এই সফরের আগে উচ্চ-পর্যায়ের প্রস্তুতি এবং বেশ কিছু কূটনৈতিক (diplomatic) আলোচনা করা হবে। মনে করা হচ্ছে যে এই সফর ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে একটি নতুন দিশা দেবে এবং বেশ কিছু বড় চুক্তি (agreements) স্বাক্ষরিত হতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো (bilateral issues) দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা চুক্তি, জ্বালানি আমদানি-রপ্তানি, বৈশ্বিক নিরাপত্তা (global security), এশীয় স্থিতিশীলতা (Asian stability) এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী (counter-terrorism) উদ্যোগ। পুতিনের সফরের সময় এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা হবে এবং উভয় দেশ ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বকে (partnership) আরও শক্তিশালী করবে।
তেল বাণিজ্য নিয়ে পুতিনের মন্তব্য
ভালদাই ডিসকাশন ক্লাব (Valdai Discussion Club)-এ বক্তব্য রাখার সময় পুতিন বলেন যে, যদি ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তবে তাদের ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে ভারতের জন্য রাশিয়ান তেল কেনা একটি অর্থনৈতিক প্রয়োজন (economic necessity)। পুতিন বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন যে, মোদি বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না এবং ভারতের মর্যাদা (dignity) বজায় রাখবেন।
ঐতিহাসিক সম্পর্কের দৃঢ়তা
ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী। স্নায়ুযুদ্ধের (Cold War) সময় থেকেই উভয় দেশ একে অপরের ওপর আস্থা রেখেছে। রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা অংশীদার (defense partner) ছিল এবং আজও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর (armed forces) কাছে থাকা অস্ত্রের একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে আসে। মহাকাশ এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও রাশিয়া ভারতকে সাহায্য করেছে। পুতিন ও মোদির ব্যক্তিগত বোঝাপড়া এবং সমন্বয় এই সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।