চীনে অনুষ্ঠিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ পুতিন ভারত ও চীনের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। ইউক্রেন সংকটের জন্য তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করেছেন এবং বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন।
এসসিও শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫: চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারত ও চীনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি ইউক্রেন সংকট সমাধানে উভয় দেশের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। পুতিন আরও বলেন যে ইউক্রেনে চলমান সংকট কোনো আগ্রাসনের ফল নয়, বরং পশ্চিমা-সমর্থিত অভ্যুত্থানের ফলাফল।
ভারত ও চীনের মধ্যস্থতার প্রশংসা
প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁর ভাষণে বলেন যে ভারত ও চীন ইউক্রেন সংকটকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি এটিকে উভয় দেশের কূটনৈতিক সাফল্য এবং দায়িত্বশীল আচরণ বলে উল্লেখ করেন। পুতিন বিশ্বাস করেন যে বিশ্বব্যাপী সংকট নিরসনের জন্য বড় দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধতা এবং পারস্পরিক আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।
ইউক্রেন সংকট নিয়ে পুতিনের বড় মন্তব্য
পুতিন পুনরায় বলেন যে রাশিয়া ইউক্রেনে কোনো আগ্রাসন চালায়নি। তাঁর দাবি, বর্তমান সংকটের সূচনা হয়েছিল যখন কিয়েভে পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনে ক্ষমতা পরিবর্তন ঘটে। পুতিনের মতে, এই অভ্যুত্থানই আসল কারণ যার ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্পর্ক খারাপ হয় এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আলাস্কা বৈঠকের উল্লেখ
তাঁর ভাষণে পুতিন আরও বলেন যে তিনি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত তাঁর বৈঠকের বিবরণ অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথে শেয়ার করবেন। তিনি বলেন যে এই বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য হয়েছে যা ভবিষ্যতে ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।
এসসিও-র ভূমিকার উপর জোর
পুতিন এসসিও-কে এমন একটি মঞ্চ হিসেবে অভিহিত করেন যা আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে গুরুতর এবং গঠনমূলক আলোচনা করে। তিনি বলেন যে এসসিও কেবল নিরাপত্তার বিষয়ে নয়, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুতিনের মতে, এই সংগঠনটি পুরনো ইউরো-কেন্দ্রিক এবং ইউরো-আটলান্টিক মডেলের পরিবর্তে নতুন ইউরেশিয়ান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করছে।
বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন যে এসসিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে। এটি কেবল ডলারের উপর নির্ভরতা কমাবে না, বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতাও শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন যে এসসিও দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গতি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
চীনা প্রেসিডেন্টের উদ্বোধনী ভাষণ
এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন। তিনি সকল সদস্য দেশকে নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখার আহ্বান জানান। শি জিনপিং বলেন যে বিশ্বকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করা উচিত। তিনি সংঘাত ও ভীতি প্রদর্শনের নীতির বিরোধিতা করার কথাও বলেন।
শান্তি ও সহযোগিতার বার্তা
এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে সকল নেতার বার্তা ছিল স্পষ্ট। বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা হলো ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চাহিদা। ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো যখন এই দিকে এগিয়ে আসে, তখন বিশ্ব আশার এক নতুন আলো দেখতে পায়।