সিআরপিএফ-এর বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধির সুরক্ষা প্রোটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগ। ছয়টি বিদেশ ভ্রমণের কারণে বিতর্ক বৃদ্ধি। কংগ্রেস চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি তদন্তের দাবি করেছে।
নয়াদিল্লি: কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি সম্প্রতি এক নতুন বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF) সম্প্রতি রাহুল গান্ধিকে একটি চিঠি লিখেছে, যেখানে তাঁকে সুরক্ষা প্রোটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে। এই চিঠিটি রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে যে কেন রাহুল গান্ধি তাঁর সুরক্ষা নির্দেশিকা উপেক্ষা করছেন।
সিআরপিএফ এই চিঠিতে স্পষ্ট করেছে যে রাহুল গান্ধি গত নয় মাসে ছয় বার কোনও তথ্য ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এই আচরণ তাঁর Z+ ক্যাটাগরির সুরক্ষাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। সিআরপিএফ-এর মতে, এই ধরনের ত্রুটি তাঁর সুরক্ষার জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় এবং এর ফলে তিনি কোনও বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
সিআরপিএফ-এর অভিযোগ: সুরক্ষা প্রোটোকলের উপেক্ষা
সিআরপিএফ এই চিঠিতে জানিয়েছে যে রাহুল গান্ধি ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৩ বার সুরক্ষা নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছেন। বিশেষ করে গত নয় মাসে তাঁর ছয়টি বিদেশ সফর উল্লেখযোগ্য। সিআরপিএফ তাঁর ভ্রমণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে:
- ইতালি: ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে ৯ জানুয়ারি, ২০২৫
- ভিয়েতনাম: ১২ মার্চ, ২০২৫ থেকে ১৭ মার্চ, ২০২৫
- দুবাই: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
- কাতার: ১১ জুন, ২০২৫ থেকে ১৮ জুন, ২০২৫
- লন্ডন: ২৫ জুন, ২০২৫ থেকে ৬ জুলাই, ২০২৫
- মালয়েশিয়া: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সিআরপিএফ-এর মতে, এই ধরনের ভ্রমণের বিষয়ে তাদের সময়মতো জানানো হয়নি এবং এটি সরাসরি সুরক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া এবং প্রশ্ন
সিআরপিএফ-এর চিঠির জবাবে কংগ্রেসও প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X (পূর্বের টুইটার) এ লিখেছেন যে এই চিঠির সময়টি সন্দেহজনক। তিনি বলেছিলেন যে রাহুল গান্ধি বর্তমানে ভোট চুরি এবং অন্যান্য সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তথ্য ফাঁস করতে চলেছেন। এই সময়ে তাঁর কণ্ঠ রোধ করার এবং বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের দাবি, সিআরপিএফ-এর চিঠির মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পবন খেরা সরাসরি প্রশ্ন করেছেন যে সরকার কি রাহুল গান্ধির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ভীত এবং এটি বন্ধ করার জন্য সুরক্ষা লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
বিজেপি-র প্রশ্ন, তদন্তের দাবি
সিআরপিএফ-এর চিঠির পর বিজেপি-ও এই বিষয়ে কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধিকে নিশানা করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন যে রাহুল গান্ধিকে সুরক্ষা দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি নিজে সুরক্ষা প্রোটোকল মেনে চলেন না। তিনি আরও বলেন যে ৯ মাসে ছয় বার বিদেশ ভ্রমণের তদন্ত হওয়া উচিত।
গিরিরাজ সিং স্পষ্ট বলেছেন যে রাহুল গান্ধি ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে গেলে তার প্রকাশ করা উচিত। অন্যথায়, সরকারের উচিত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে খুঁজে বের করা যে তিনি বিদেশে যাওয়ার সময় কী করেন এবং তাঁর সফরের উদ্দেশ্য কী।
রাজনৈতিক মহলে ওঠা প্রশ্ন
সিআরপিএফ-এর চিঠির পর রাজনৈতিক পরিবেশে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন যে এই চিঠির সময় নির্বাচন এবং সংবেদনশীল বিষয়গুলির সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিরোধীদের অভিযোগ যে এই চিঠি রাহুল গান্ধিকে অস্থিতিশীল করতে এবং তাঁর আসন্ন তথ্য ফাঁস থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের মতে এটি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করার চেষ্টা। এটি এই প্রশ্নও উত্থাপন করে যে সুরক্ষা সংস্থাগুলি রাজনৈতিক বিষয়ে কতটা নিরপেক্ষ থাকতে পারে।