রেলওয়ে নিয়োগে স্বচ্ছতা: ওয়ান টাইম রেজিস্ট্রেশন, ফেস রেকগনিশন ও পরীক্ষার ক্যালেন্ডার

রেলওয়ে নিয়োগে স্বচ্ছতা: ওয়ান টাইম রেজিস্ট্রেশন, ফেস রেকগনিশন ও পরীক্ষার ক্যালেন্ডার

রেলওয়ে নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ওয়ান টাইম রেজিস্ট্রেশন, ফেস রেকগনিশন এবং ই-কেওয়াইসি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। প্রতি বছর পরীক্ষার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হবে এবং জালিয়াতির ওপর কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

রেলওয়ে আপডেট: রেল মন্ত্রক সারা দেশের যুবকদের জন্য চাকরির পথ সুগম করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। রেলের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ, প্রযুক্তি-নির্ভর এবং সময়ানুবর্তী হবে। এই পরিবর্তনগুলির উদ্দেশ্য শুধু প্রক্রিয়াটিকে সহজ করা নয়, বরং জালিয়াতি বন্ধ করে যোগ্য প্রার্থীদের সময় মতো সুযোগ দেওয়াও।

এখন শুধুমাত্র একবার রেজিস্ট্রেশন করেই সব নিয়োগে আবেদন

রেলওয়ে “ওয়ান টাইম রেজিস্ট্রেশন” অর্থাৎ OTR সিস্টেম চালু করেছে। এখন প্রার্থীদের বারবার আলাদা ফর্ম পূরণ করার প্রয়োজন হবে না। একবার রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়ার পরে, তাঁরা ভবিষ্যতের সমস্ত রেলওয়ে নিয়োগে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। এর ফলে সময় এবং শ্রম উভয়ই বাঁচবে, বিশেষ করে সেইসব যুবকদের জন্য, যারা বারবার ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

আধার এবং ফেস রেকগনিশন দিয়ে কঠোর পরিচয় যাচাই

নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জালিয়াতি মুক্ত করতে রেলওয়ে ই-কেওয়াইসি (e-KYC) এবং ফেস রেকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। পরীক্ষার সময় প্রার্থীর আধার কার্ডের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় যাচাই করা হবে এবং তাঁর মুখ সিস্টেমের সঙ্গে মেলানো হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, পরীক্ষা সেই ব্যক্তিই দিচ্ছেন যিনি আবেদন করেছেন।

এখন প্রতি বছর প্রকাশিত হবে পরীক্ষার ক্যালেন্ডার

রেল মন্ত্রক এখন গ্রুপ সি শ্রেণীর সমস্ত নিয়োগের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার ক্যালেন্ডার প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে NTPC, ALP, টেকনিশিয়ান, RPF এবং লেভেল-১ এর মতো প্রধান নিয়োগগুলি অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে প্রার্থীরা আগে থেকেই জানতে পারবেন যে কবে আবেদন শুরু হবে এবং পরীক্ষা কবে হবে। এর ফলে প্রস্তুতি আরও ভালো এবং সময়ানুবর্তী হবে।

আবেদনের বিপুল সংখ্যা, তবুও দ্রুত প্রক্রিয়া

রেলওয়ে জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালে ১.০৮ লক্ষেরও বেশি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। এর মধ্যে NTPC, ALP এবং RPF-এর মতো প্রধান পদগুলির জন্য ১.৫ কোটির বেশি আবেদন জমা পরেছিল। এত বিপুল সংখ্যক আবেদন আসার পরেও, রেলওয়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে ফল প্রকাশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি গড়ে ৮ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করেছে। ভবিষ্যতে এটি আরও দ্রুত করা হবে।

পরীক্ষা কেন্দ্র হবে বাড়ির কাছে

প্রার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের সর্বোচ্চ দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার এবং সর্বনিম্ন ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করেছে। এছাড়াও, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১০০% মোবাইল জ্যামার বসানো হয়েছে, যাতে প্রযুক্তিগত উপায়ে কোনো জালিয়াতি না হতে পারে। জুন ২০২৫-এর পরীক্ষায় এই পদ্ধতির ভালো প্রভাব দেখা গেছে এবং কোনো জালিয়াতির খবর পাওয়া যায়নি।

পদোন্নতি এবং অপেক্ষমান তালিকায়ও সংস্কার

রেলওয়ে এখন তার কর্মীদের অভ্যন্তরীণ পদোন্নতির জন্য CBAT এবং ট্যাবলেট-ভিত্তিক পরীক্ষারও ব্যবহার করবে। এর ফলে যোগ্য কর্মীরা সময় মতো পদোন্নতি পাবেন। অন্যদিকে, যে প্রার্থীরা নির্বাচনের পরে যোগ দেন না, তাঁদের স্থানে অপেক্ষমান তালিকা (ওয়েটিং লিস্ট) থেকে অন্য যোগ্য প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হবে। এই সিস্টেম নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ করবে।

ধর্মীয় প্রতীকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে নিরাপত্তা পরীক্ষা জরুরি

পরীক্ষার সময় ধর্মীয় প্রতীক, যেমন - চুড়ি, টিপ, পাগড়ি ইত্যাদির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা নেই। যদিও, নিরাপত্তা কারণে এগুলি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের আগে পরীক্ষা করা হবে এবং পরীক্ষার পরেই অনুমতি দেওয়া হবে।

যোগ্যতাতেও স্পষ্টতা

লেভেল-১ পদের জন্য দশম শ্রেণী, আইটিআই (ITI) অথবা ন্যাশনাল অ্যাপ্রেন্টিশিপ সার্টিফিকেট (National Apprenticeship Certificate) আছে এমন প্রার্থীরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এর ফলে প্রার্থীরা তাঁদের যোগ্যতার স্তর অনুযায়ী সঠিক নিয়োগের তথ্য জানতে পারবেন।

Leave a comment