প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার উত্থান: নাকের অস্ত্রোপচার থেকে বিশ্ব জয়

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার উত্থান: নাকের অস্ত্রোপচার থেকে বিশ্ব জয়

নাকের অস্ত্রোপচারের পর দুটি ছবি থেকে বাদ পড়া প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে সেটে তিরস্কারও শুনতে হয়েছিল, কিন্তু তিনি কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এবং আজ গ্লোবাল স্টার হয়ে উঠেছেন।

Priyanka Chopra: প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, যিনি আজ একজন গ্লোবাল আইকন হিসেবে পরিচিত, তাঁর জীবন যতটা ঝলমলে দেখায়, ততটাই সংগ্রামপূর্ণ ছিল। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মুকুট পরা থেকে হলিউডে সাফল্যের পতাকা ওড়ানো পর্যন্ত এই যাত্রা সহজ ছিল না। এমন একটা সময় এসেছিল যখন নাকের অস্ত্রোপচারের কারণে তাঁকে দুটি বড় ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং একজন কোরিওগ্রাফার সেটে তাঁকে খুব বকাবকি করেছিলেন। ১৮ জুলাই প্রিয়াঙ্কার জন্মদিন এবং এই বিশেষ দিনে তাঁর জীবনের সেইসব অজানা ও সংগ্রামী গল্পগুলি জেনে নিন যা প্রত্যেক উঠতি শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

বেরেলি থেকে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার জন্ম একটি আর্মি ব্যাকগ্রাউন্ডের পরিবারে। বাবা-মা দুজনেই ডাক্তার ছিলেন এবং তিনি একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে বড় হয়েছেন। ছোটবেলায় প্রিয়াঙ্কা অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না, বরং তাঁর স্বপ্ন ছিল এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে তাঁর ছোট ভাই সিদ্ধার্থ চোপড়া তাঁর ছবিগুলি মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

যখন মাথায় উঠল মিস ওয়ার্ল্ডের মুকুট

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া শুধু মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশই নেননি, মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ডের খেতাব জেতার পর ২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ডও হয়েছিলেন। সেই সময় পরপর দ্বিতীয়বার ভারতের কোনো প্রতিযোগী মিস ওয়ার্ল্ড হয়েছিলেন। এরপর, যখন প্রিয়াঙ্কাকে মুকুট পরানো হলো, তখন বিশ্ব প্রথমবার দেশি গার্লের ঝলক দেখল। কিন্তু গ্ল্যামারের এই জগতে প্রবেশের পরেই আসল সংগ্রামের শুরু হতে যাচ্ছিল।

নাকের অস্ত্রোপচার এবং ছবি থেকে বাদ

প্রিয়াঙ্কার আত্মজীবনী ‘Unfinished’ অনুসারে, মিস ওয়ার্ল্ড হওয়ার কয়েক মাস পরেই তিনি তিনটি হিন্দি এবং একটি তামিল ছবি साइन করেছিলেন। কিন্তু একটি মেডিকেল সার্জারি তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। নাকের হাড় ভেঙে যাওয়ার পর তাঁকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। এরপরেই গুজব ছড়াতে শুরু করে যে প্রিয়াঙ্কা আগের মতো আর নেই। এর প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে তাঁকে দুটি বড় ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল— যার মধ্যে একটি ছিল তাঁর ডেবিউ ফিল্মও।

ছবি ‘আন্দাজ’-এর শুটিং এবং সেটে বকাবকি

প্রিয়াঙ্কা তৃতীয় ছবি ‘দ্য হিরো’-তে একটি সহায়ক চরিত্রে সুযোগ পান এবং চতুর্থ ছবিটি ছিল তামিল ভাষার ‘থামিজান’। এরপর তিনি ‘আন্দাজ’-এ বড় সুযোগ পান, যেখানে তাঁর সঙ্গে লারা দত্ত এবং অক্ষয় কুমার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। কেপটাউনে ছবির একটি গানের শুটিংয়ের সময় প্রিয়াঙ্কাকে ৩০টির বেশি টেক দিতে হয়েছিল। এতে কোরিওগ্রাফার রাজু খান বিরক্ত হয়ে তাঁকে বকাবকি করে বলেন— 'কাজের আগে কাজটা শিখুন।'

এই বকাবকি প্রিয়াঙ্কাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তিনি হার না মেনে পণ্ডিত বীরু কৃষ্ণনের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। যখন পুনরায় শুটিং শুরু হলো, তখন রাজু খান তাঁর প্রথম শট দেখেই বলেছিলেন— 'আমি জানি না তুমি কী করেছ, তবে এখন তুমি একজন ডান্সার।'

আন্দাজ থেকে পরিচিতি এবং সম্মান

ছবি ‘আন্দাজ’ হিট হয় এবং প্রিয়াঙ্কা সেরা ডেবিউ অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান। এটি ছিল সেই মোড়, যেখান থেকে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের আসল উড়ান শুরু করেন। এরপর তিনি আর পিছন ফিরে তাকাননি। ‘ফ্যাশন’, ‘বরফি’, ‘মেরি কম’, ‘ডন’-এর মতো ছবিগুলি দিয়ে তিনি শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বরং ভারতীয় সিনেমাতেও নিজের একটি আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন।

হলিউড পর্যন্ত যাত্রা

বলিউডে সাফল্য পাওয়ার পর প্রিয়াঙ্কা হলিউডের দিকে পা বাড়ান। সেখানে তিনি 'কোয়ান্টিকো', 'বেওয়াচ', 'দ্য মেট্রিক্স রিসারেকশনস', এবং 'সিটাডেল'-এর মতো শো এবং ছবিতে কাজ করে গ্লোবাল স্টারের মর্যাদা অর্জন করেছেন। এখন তিনি এস.এস. রাজামৌলির একটি প্যান ইন্ডিয়ান ছবিতে দেখা যাবেন, যা থেকে তিনি আবারও ভারতীয় দর্শকদের হৃদয়ে ফিরতে প্রস্তুত।

Leave a comment