মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপের আবহে, রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ এই মাসে নয়াদিল্লি সফর করতে পারেন।
মস্কো: আমেরিকা থেকে শুল্ক নিয়ে আসা উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ এই মাসে নয়াদিল্লি সফর করতে পারেন। কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পাত্রুশেভের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হল সার সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ভারত থেকে চিংড়ি আমদানি। ভারত আমেরিকার চিংড়ির বৃহত্তম সরবরাহকারী, কিন্তু ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত ৫০% শুল্কের পর এই বাণিজ্যে গুরুতর প্রভাব পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়া ভারতীয় চিংড়ি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বাজার হয়ে উঠতে পারে। পাত্রুশেভের এই সফর রাশিয়ার চিংড়ি আমদানি কৌশল উন্নত করতে এবং ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য জোরদার করতে সাহায্য করতে পারে।
মার্কিন শুল্কের পর ভারতের কৌশল
আমেরিকা ভারতীয় চিংড়ির উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে, যা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে। আমেরিকায় ভারতের চিংড়ি রপ্তানি সর্বাধিক ছিল, কিন্তু এখন মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির পর এই বাণিজ্য প্রভাবিত হয়েছে। মোট মার্কিন চিংড়ি আমদানির একটি বড় অংশ ভারত থেকে আসে, কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কের পর ভারতকে ইকুয়েডর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং চীনের মতো দেশ থেকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার চিংড়ি বাজার ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য একটি নতুন সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। পাত্রুশেভের সফরের সময় ভারতের প্রধান মন্ত্রীদের সাথে বাণিজ্যিক আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে কৃষি ও সামুদ্রিক পণ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে পারে।
রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফর
দিমিত্রি পাত্রুশেভের সফরের প্রধান উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ভারতে সার সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
- ভারতীয় চিংড়ি রপ্তানিকারকদের জন্য রাশিয়াকে একটি নতুন এবং আকর্ষণীয় বাজার প্রদান করা।
- কৃষি ও সামুদ্রিক পণ্যের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাশিয়া ভারতীয় চিংড়ি রপ্তানিকারকদের জন্য একটি কৌশলগত বিকল্প হতে পারে। পাত্রুশেভের সফর উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং মার্কিন শুল্কের চাপ থেকে ভারতকে স্বস্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে।
আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধ
ট্রাম্প প্রশাসন ভারত এবং চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়ানোর জন্য একটি আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি G-7 পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আমেরিকা ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করার দাবি জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বৈঠকের সময় বলেছিলেন যে G-7-এর উচিত সেইসব দেশগুলোর উপর শুল্ক আরোপে আমেরিকাকে সমর্থন করা, যারা রাশিয়া থেকে তেল এবং অন্যান্য সম্পদ কেনে।
এই পরিকল্পনার অধীনে, আমেরিকা ভারতের উপর ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ট্রাম্প প্রশাসন অনুসারে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেনের যুদ্ধে অর্থায়ন করছে। তবে, ভারত এই অভিযোগগুলি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলে অভিহিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর পরবর্তী কৌশল
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, ভারত আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত শুল্কের প্রভাব কমাতে বিকল্প বাজার খুঁজছে। রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য ও কৃষি সহযোগিতা বৃদ্ধি এই পরিকল্পনার একটি অংশ। চিংড়ি ও সারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব বাড়ালে ভারত রপ্তানিকারকদের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে এবং বাণিজ্য স্থিতিশীল রাখতে পারবে।