সনথ জয়সুরিয়ার বিতর্কিত জীবন: মাঠের নায়ক, -->

সনথ জয়সুরিয়ার বিতর্কিত জীবন: মাঠের নায়ক,</code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></code></co

ইশক আর যুদ্ধে সবকিছুই ন্যায্য—এই ধারণাটা সিনেমায় চলে, কিন্তু বাস্তব জীবনে সবকিছুরই একটা সীমা থাকে। মানুষ যখন সীমা লঙ্ঘন করে, তখন অনেক সময় তার ফল ভুগতে হয়। যারা নিজেদের জীবনে সংযম ও ভারসাম্য বজায় রেখে চলে, তারাই প্রকৃত উদাহরণ তৈরি করে।

স্পোর্টস নিউজ: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া কিংবদন্তি খেলোয়াড় সনথ জয়সুরিয়া মাঠে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং দিয়ে সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন বিতর্কে জর্জরিত ছিল। 'মাতারার ঝড়' নামে পরিচিত এই ক্রিকেটার নব্বইয়ের দশকে একদিনের ক্রিকেটে ওপেনিং ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের উত্থান-পতন তাঁকে গভীর সংকটে ফেলে দেয়। বিশেষ করে তাঁর তৃতীয় বিবাহের পরিণতি এমন হয়েছিল যে তিনি প্রকাশ্যে লজ্জায় পড়েছিলেন।

আসলে, সনথ জয়সুরিয়ার তৃতীয় স্ত্রী মালিকা সিরিসেনার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়, যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়েছিল যে, এই ভিডিওটি জয়সুরিয়া নিজেই মালিকার বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ হিসেবে ফাঁস করেছেন। শ্রীলঙ্কায় এই বিতর্ক তখন বড় আকার নেয়, যখন মালিকা প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন যে ভিডিও ফাঁসের পেছনে জয়সুরিয়ার হাত রয়েছে।

তিনটি বিয়ে, তিনটিই ব্যর্থ

জয়সুরিয়ার কর্মজীবন যেমন সফল ছিল, তাঁর বিবাহিত জীবন ছিল তেমনই বিতর্কিত ও ব্যর্থ। ১৯৯৮ সালে তিনি এয়ার শ্রীলঙ্কার গ্রাউন্ড হোস্টেস সুমুদু করুনানায়েকেকে বিয়ে করেন, যা এক বছরের মধ্যেই ভেঙে যায়। এরপর ২০০০ সালে তিনি এয়ার হোস্টেস সান্দ্রা ডি সিলভাকে বিয়ে করেন, যাঁর সাথে তাঁর তিনটি সন্তানও ছিল। কিন্তু এই সম্পর্কও ভেঙে যায়, যখন জয়সুরিয়ার জীবনে অভিনেত্রী মালিকা সিরিসেনার আগমন ঘটে।

মালিকার সঙ্গে তিনি ২০১২ সালে গোপনে বিয়ে করেন, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই সেই সম্পর্কও শেষ হয়ে যায়। খবর অনুযায়ী, মালিকা জয়সুরিয়াকে ছেড়ে একজন ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন, যাঁর কারণে আহত হয়ে জয়সুরিয়া कथितভাবে তাঁর ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস করে দেন।

বিতর্ক কেড়ে নিল খ্যাতি

২০১৭ সালে মালিকার অশ্লীল ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সহ পুরো ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়। মালিকা সরাসরি জয়সুরিয়ার উপর এটি ফাঁস করার অভিযোগ করেন এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও জয়সুরিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে, এর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। কিছু মিডিয়া রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছিল যে, ভিডিওর ব্যক্তিটি তাঁর মতো দেখতে হতে পারে, তবে এই বিতর্ক তাঁর নামের সঙ্গে চিরকাল জুড়ে যায় এবং তাঁর ভাবমূর্তিতে গভীর আঘাত লাগে।

মাঠের মাস্টার, ব্যক্তিগত জীবনে হার

জয়সুরিয়া তাঁর কর্মজীবনে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জিতিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ক্রিকেট জগতে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং ভারত সহ অনেক শক্তিশালী দলকে পরাস্ত করে। রমেশ কালুভিথারানার সঙ্গে ওপেনিংয়ে তাঁর আক্রমণাত্মক খেলা একদিনের ক্রিকেটে বিপ্লব এনেছিল। এমনকি ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার স্বপ্নেও অনেকবার জল ঢেলেছিল।

তিনি ৪৪৫টি একদিনের ম্যাচে ২৮টি সেঞ্চুরি এবং ৬৮টি হাফ সেঞ্চুরি করেন এবং ১৩,০০০-এর বেশি রান করেন। বোলিংয়েও ৩২৩টি উইকেট নিয়ে অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করে সাংসদ হন এবং গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

আইসিসি থেকেও ধাক্কা

জয়সুরিয়ার বিতর্ক শুধু ব্যক্তিগত জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না। ২০১৯ সালে আইসিসি দুর্নীতিবিরোধী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তাঁকে দুই বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করে। জয়সুরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে তদন্তে সহযোগিতা করেননি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করেছেন। এই সমস্ত বিতর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কায় জয়সুরিয়ার জনপ্রিয়তা কমেনি।

লোকেরা আজও তাঁকে 'মাতারার ঝড়' বলে স্মরণ করে, যিনি প্রতিপক্ষের বোলারদের দিশেহারা করে দিতেন। ৩০ জুন ১৯৬৯ সালে জন্ম নেওয়া এই মহান খেলোয়াড়ের কর্মজীবন বিতর্কিত কারণে পরে ম্লান হয়ে গেলেও, তাঁর ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

শিক্ষা দিয়ে গেলেন

জয়সুরিয়ার গল্প আমাদের এটাই শেখায় যে, খেলায় যত উঁচুতে ওঠা যাক না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে সংযম ও শালীনতা বজায় না থাকলে বিতর্ক আপনার সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে। ভালোবাসায় প্রতারিত হয়ে কারও সম্মান ও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা কোনো দিক থেকেই সঠিক নয়। এই কারণেই আজও জয়সুরিয়ার নাম নিলে মানুষ তাঁর খেলার পাশাপাশি এই বিতর্কগুলিও স্মরণ করে।

Leave a comment