ট্রাম্পের উদ্দেশে ইঙ্গিত জিনপিং স্পষ্ট— হস্তক্ষেপ চলবে না আধিপত্যও নয়

ট্রাম্পের উদ্দেশে ইঙ্গিত জিনপিং স্পষ্ট— হস্তক্ষেপ চলবে না আধিপত্যও নয়

উদ্বোধনী ভাষণেই জিনপিং-এর কড়া বার্তা

চিনের তিয়ানজিনে শুরু হয়েছে শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সামিট। সম্মেলনের মঞ্চে উঠেই হোস্ট দেশ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নাম না করেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বে যে দাদাগিরি চলছে, তা আর বরদাস্ত করা হবে না। বহিরাগত হস্তক্ষেপও আমরা মানব না।’’

দাদাগিরি আর চলবে না— ট্রাম্পকে খোঁচা

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, জিনপিং সরাসরি ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তাচ্ছিল্য করার আচরণ বা বুলিং বিহেভিয়ার এখন বিশ্বের অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।’’ যদিও ট্রাম্পের নাম নেননি চিনা প্রেসিডেন্ট, তবে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, কাদের উদ্দেশে এই বার্তা।

ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদের পক্ষে সওয়াল

জিনপিং তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতি কোনও অবস্থাতেই চলবে না। আমাদের দরকার ন্যায়বিচার এবং বহুত্ববাদ।’ তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া কোনও দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সমান সম্মান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখা জরুরি।

২০ দেশের নেতাদের সামনে স্পষ্ট ইঙ্গিত

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ২০ জন রাষ্ট্রনেতা। তাঁদের সামনে দাঁড়িয়েই জিনপিং ঘোষণা করেন, কোনও বহিরাগতের হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব উন্নয়ন রক্ষার অধিকার রাখে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন আমেরিকার ‘দাদাগিরি নীতি’র বিরুদ্ধেই এই মন্তব্য।

গ্লোবাল সাউথ-এর সংহতি জোরদার

তিয়ানজিন সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী করা। ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কণ্ঠস্বর জোরালো করতে চাইছে চিন। পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক ও অর্থনৈতিক জোটের প্রভাবকে টক্কর দিতে SCO-কে তারা আরও প্রভাবশালী রূপ দিতে বদ্ধপরিকর।

নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খসড়া

জিনপিং-এর দাবি, SCO এখন এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে। এখানে কোনও আধিপত্যবাদ নয়, বরং সমান অংশীদারিত্বই মূলমন্ত্র। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এটি কার্যত পশ্চিমা ব্লকের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প মঞ্চ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির আবহে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা

ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক ট্যারিফ আরোপ করে বিশ্ববাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে। সেই আবহেই জিনপিং-এর এই বার্তা এসেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, চিনা প্রেসিডেন্টের বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক দিক থেকেও একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা।

রাশিয়া-ভারতের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

তিয়ানজিনে বসা এবারের সামিটের মূল সুর গ্লোবাল সাউথ-এর ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে আরও জোরদার করা। উন্নয়নশীল দেশগুলির সংহতি গড়ে তুলে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক ও অর্থনৈতিক ব্লকের পাল্টা ভারসাম্য তৈরি করতেই SCO-কে শক্তিশালী করার দিকে নজর দিচ্ছে চিন।

আন্তর্জাতিক অস্থিরতার মাঝেই নতুন বার্তা

বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান ইস্যু এবং মার্কিন অর্থনৈতিক চাপের ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে SCO-র মঞ্চ থেকে জিনপিং-এর বক্তব্যকে অনেকেই নতুন ভূ-রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, ‘‘বিশ্বের প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব উন্নয়ন রক্ষার অধিকার রাখে। কোনও দাদাগিরি আমরা মেনে নেব না।

পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল চিনা প্রেসিডেন্ট

শেষ পর্যন্ত একথা বলাই যায়, এই সামিট শুধু সহযোগিতার মঞ্চ নয়, বরং পশ্চিমাদের আধিপত্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রেও পরিণত হয়েছে। শি জিনপিংয়ের বক্তব্যে যে কড়া বার্তা লুকিয়ে রয়েছে, তা গোটা বিশ্ব রাজনীতিতে আগামী দিনে প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের।

Leave a comment