যৌন শোষণ ও আর্থিক তছরুপের অভিযোগে সাকেত আদালতের বিচারক संजीव কুমার সিং সাসপেন্ড

যৌন শোষণ ও আর্থিক তছরুপের অভিযোগে সাকেত আদালতের বিচারক संजीव কুমার সিং সাসপেন্ড

দিল্লি হাইকোর্ট যৌন শোষণ মামলার ভুক্তভোগীর ওপর চাপ সৃষ্টি এবং আর্থিক তছরুপের গুরুতর অভিযোগের পর সাকেত আদালতের বিচারক संजीव কুমার সিংকে সাসপেন্ড করেছেন। তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

দিল্লি: দিল্লি হাইকোর্ট সাকেত আদালতের বিচারক संजीव কুমার সিং-এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে সাসপেন্ড করেছেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ২৯ আগস্টের ফুল কোর্ট মিটিং-এ। বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক তছরুপ এবং যৌন শোষণ মামলার ভুক্তভোগীর ওপর সমঝোতার জন্য চাপ সৃষ্টি করা।

ফুল কোর্ট মিটিং-এ বড় সিদ্ধান্ত

২৯ আগস্ট দিল্লি হাইকোর্টের ফুল কোর্ট মিটিং ডাকা হয়েছিল। এই মিটিং-এ বিচারক संजीव কুমার সিং-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হয়। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালত সিদ্ধান্ত নেয় যে তাঁকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করা হবে। এই আদেশের আওতায় তিনি এখন কোনও বিচারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং কেবল সদর দফতরে উপস্থিত থাকতে হবে।

নিলম্বনের সময় কেবল সাবসিসটেন্স অ্যালাউন্স দেওয়া হবে

দিল্লি হাইকোর্টের আদেশে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, নিলম্বনের সময়কালে বিচারক संजीव কুমার সিং কেবল সাবসিসটেন্স অ্যালাউন্স পাবেন। এই সময়ে তিনি কোনও অতিরিক্ত ভাতা বা সুবিধা পাবেন না।

পূর্ব অনুমতি ছাড়া দিল্লি ছাড়ার অনুমতি নেই

দিল্লি হাইকোর্ট আরও স্পষ্ট করেছে যে, বিচারক संजीव কুমার সিং নিলম্বনের সময়কালে পূর্বানুমতি ছাড়া দিল্লি ছাড়তে পারবেন না। আদেশ অনুযায়ী, যতদিন তদন্ত শেষ না হয়, ততদিন তাঁকে দিল্লিতেই থাকতে হবে।

কে এই संजीव কুমার সিং

সংজীব কুমার সিং সাকেত আদালতে জেলা বিচারকের পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাণিজ্যিক আদালতের মামলার শুনানি করতেন এবং সাকেত আদালতের আবাসিক কমপ্লেক্স কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি সিনিয়র বিচারকদের মধ্যে গণ্য হতেন, কিন্তু অভিযোগ সামনে আসার পর তাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কী কী অভিযোগ

সূত্রের খবর অনুযায়ী, संजीव কুমার সিং-এর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক লেনদেনে তছরুপ, এক আইনজীবীর ওপর চাপ সৃষ্টি এবং যৌন শোষণ মামলার ভুক্তভোগীকে সমঝোতার জন্য বাধ্য করা।

যৌন শোষণ মামলার সঙ্গে জড়িত এই অভিযোগ তখন সামনে আসে যখন দিল্লি হাইকোর্টে একটি আপিলের শুনানির সময় ভুক্তভোগী অভিযোগ জানান। তিনি বলেন যে, বিচারক তাঁকে মামলা শেষ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায় এবং আদালত অবিলম্বে এটিকে তদন্তের জন্য ভিজিল্যান্স রেজিস্ট্রার-এর কাছে পাঠিয়ে দেয়।

হাইকোর্ট কেন কঠোর সিদ্ধান্ত নিল

ভিজিল্যান্স রেজিস্ট্রার-এর রিপোর্ট হাইকোর্টের কাছে আসার পর বিষয়টি গুরুতর বলে বিবেচিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, অভিযোগের প্রকৃতি এতটাই গুরুতর যে বিচারকের পদে বহাল থাকা ঠিক হবে না। এরপর ২৯ আগস্ট ফুল কোর্ট মিটিং-এ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তাঁকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করা হবে।

বিচার বিভাগের সুনামের ওপর প্রশ্ন

এই ঘটনা বিচার বিভাগের সুনামের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিচারকদের কাছ থেকে আশা করা হয় যে তাঁরা বিচার প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রাখবেন। কিন্তু যখন কোনও বিচারকের বিরুদ্ধেই আর্থিক তছরুপ এবং যৌন শোষণের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে, তখন তা বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে।

বর্তমানে বিচারক संजीव কুমার সিং-এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। হাইকোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, যতক্ষণ তদন্ত শেষ না হয়, ততক্ষণ তিনি তাঁর পদে বহাল হতে পারবেন না। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যার মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্তও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

Leave a comment