বলিউড অভিনেত্রী শেফালী জারীওয়ালার ৪২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুপারহিট গান 'কাঁটা লাগা' দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া শেফালীর আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শোকস্তব্ধ।
বিনোদন: 'কাঁটা লাগা' গানটির মাধ্যমে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া শেফালী জারীওয়ালার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর প্রয়াণে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শেফালীর স্বামী পরাগ ত্যাগীকে হাসপাতালের বাইরে শোকবিহ্বল অবস্থায় দেখা গেছে, তবে খুব কম লোকই জানেন যে পরাগ ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। শেফালীর প্রথম বিবাহ হয়েছিল বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক হরমিৎ সিংয়ের সঙ্গে, যিনি মীত ব্রাদার্স জুটির একজন।
হরমিৎ সিংয়ের সঙ্গে প্রথম বিবাহ
২০০২ সালে 'কাঁটা লাগা' গানটির অভূতপূর্ব সাফল্যের পর শেফালী লাইমলাইটে আসেন। কর্মজীবনের শুরুতে, ২০০৪ সালে তিনি হরমিৎ সিংকে বিয়ে করেন। হরমিৎ, তাঁর ভাই মনমিত সিংয়ের সঙ্গে মিলিতভাবে 'মীত ব্রাদার্স' নামে পরিচিত এবং বলিউডকে বহু হিট গান উপহার দিয়েছেন। সেই সময়ে হরমিতের সঙ্গীত জীবনও শীর্ষে ছিল, এবং শেফালীর নাচের কেরিয়ারও উজ্জ্বল ছিল।
তাঁদের বিবাহ বিপুল আলোচনা তৈরি করেছিল, কিন্তু এই সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পাঁচ বছর পর, ২০০৯ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বিবাহবিচ্ছেদের পর শেফালী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "হিংসা কেবল শারীরিক হয় না, মানসিকও হয়। যখন আপনাকে প্রতিটি বিষয়ে ছোট করা হয়, আপনার প্রশংসা করা হয় না, তখন এটিও মানসিক নির্যাতনের রূপ নেয়।"
যদিও হরমিৎ এ বিষয়ে কখনও স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি, তবে মনে করা হয় যে পারস্পরিক মতবিরোধ এবং দূরত্বের কারণে তাঁরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরাগ ত্যাগীর মধ্যে খুঁজে পাওয়া সত্যিকারের ভালোবাসা
হরমিতের থেকে আলাদা হওয়ার পরে শেফালী নিজেকে আবার কাজে নিয়োজিত করেন। এরই মধ্যে ২০১০ সালে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় টিভি অভিনেতা পরাগ ত্যাগীর। পরাগ, টিভি সিরিয়াল 'পবিত্র রিস্তা'-এ কাজ করে পরিচিতি পাচ্ছিলেন। এক কমন বন্ধুর মাধ্যমে হওয়া এই সাক্ষাৎ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে এবং পরে প্রেমে পরিণত হয়। ২০১৪ সালে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
পরাগ এবং শেফালীর জুটি ইন্ডাস্ট্রিতে পাওয়ার কাপল হিসেবে পরিচিত ছিল। দু'জনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই একসঙ্গে ছবি শেয়ার করতেন এবং তাঁদের দৃঢ় বন্ধন দেখাতেন। যদিও বিবাহের ১১ বছর পরেও তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না, তবে তাঁরা সন্তান দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। শেফালী নিজে বহু সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তাঁরা শীঘ্রই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চান।
শেফালীর আকস্মিক প্রয়াণ, পরাগের জন্য গভীর শোক
শেফালীর আকস্মিক প্রয়াণে পরাগ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছেন। হাসপাতালের বাইরে কাঁদতে থাকা পরাগের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের চোখে জল এনেছে। পরাগ এবং শেফালীর সম্পর্কের মধ্যে সবসময় গভীর প্রেম এবং বন্ধুত্বের প্রকাশ ছিল। তাঁদের ঘনিষ্ঠরা জানান যে পরাগ শেফালীকে প্রতিটি কঠিন সময়ে আগলে রেখেছিলেন।
বলিউড ও সঙ্গীত জগতে শোকের ছায়া
শেফালীর মৃত্যু সংবাদ শুনে মীত ব্রাদার্স অর্থাৎ তাঁর প্রাক্তন স্বামী হরমিৎ সিং এবং তাঁর ভাই মনমিতও শোক প্রকাশ করেছেন। যদিও হরমিৎ প্রকাশ্যে কোনো বড় মন্তব্য করেননি, তবে ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায় যে তিনিও এই খবরে গভীরভাবে আহত হয়েছেন। শেফালী যদিও ছবিতে বেশি কাজ করেননি, তবে 'কাঁটা লাগা' গানটির সেই রিমেক আজও মানুষজন মনে রেখেছে। বিগ বস ১৩-তেও তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো, যেখানে তিনি পরাগের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন।
কথিত আছে, জীবন কখন কোন মোড়ে কী রং দেখায়, তা কেউ জানে না। ৪২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেফালীর এভাবে চলে যাওয়া প্রমাণ করে স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি। শেফালীর প্রয়াণে একটি উজ্জ্বল তারা নিভে গেল, তবে তাঁর নাচ, হাসি এবং উদ্দীপনার স্মৃতি সবসময় মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।