বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন - এলআইআর) নিয়ে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি ক্রমাগত নির্বাচন কমিশনের উপর আক্রমণ শানাচ্ছে।
Vote Adhikar Yatra: বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী নেতারা রাজ্যের ভোটার অধিকার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরতে বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী ১৭ই আগস্ট থেকে বিহারে ১৫ দিনের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করবেন। এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর নেতা তেজস্বী যাদব, বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি)-এর মুকেশ সাহানি এবং বামপন্থী দলগুলির অনেক वरिष्ठ নেতা অংশ নেবেন।
যাত্রাটি সাसारাম জেলা থেকে শুরু হবে এবং এটি পুরো বিহারের ২১টি জেলার মধ্যে দিয়ে যাবে। এই যাত্রার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জনসংযোগ করা নয়, বরং বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা (এলআইভি - স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) -এ কথিত গরমিলগুলি তুলে ধরা। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং ভুয়ো ভোটারদের যুক্ত করা হচ্ছে।
যাত্রার বিস্তারিত সূচি
এই মহা-যাত্রার শুরু সাसारাম থেকে। এরপর যাত্রাটি ক্রমান্বয়ে ঔরঙ্গাবাদ → গয়া → ওয়াজিরগঞ্জ → নওয়াদা → শেখপুরা → লাখিসরাই → মুঙ্গের → ভাগলপুর → কাটিহার → পূর্ণিয়া → আরারিয়া → মধুবনী → দ্বারভাঙা → সীতামঢ়ী → পূর্ব চম্পারণ → পশ্চিম চম্পারণ → গোপালগঞ্জ → সিওয়ান → सारण জেলার মধ্যে দিয়ে যাবে। যাত্রাটি ৩১শে আগস্ট আরা জেলায় শেষ হবে এবং এর পরের দিন ১লা সেপ্টেম্বর পাটনায় একটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে এটি সমাপ্ত করা হবে।
যাত্রার সময় বিভিন্ন জনসভা অনুষ্ঠিত হবে, যা ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র মতো হাইব্রিড মোডে হবে। রাহুল গান্ধী এবং অন্যান্য নেতারা মঞ্চে একসাথে ভোটার অধিকার, নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
নির্বাচন কমিশনের উপর বিরোধীদের আক্রমণ
ভোটার অধিকার যাত্রার পরিকল্পনা এমন এক সময়ে করা হয়েছে যখন নির্বাচন কমিশন বিহারে এলআইআর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) নিয়ে বিরোধী আক্রমণের সম্মুখীন। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস এবং আরজেডি এটিকে ‘ভোটবন্দী’ এবং ‘দিনের আলোয় ভোটের ডাকাতি’ আখ্যা দিয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, এই যাত্রার মাধ্যমে বিহারের নাগরিকদের কাছে এই বার্তা যাবে যে গণতন্ত্রে প্রতিটি ভোটারের অধিকার সুরক্ষিত হওয়া উচিত এবং কোনও প্রকার স্বৈরাচারিতা দ্বারা তাদের বঞ্চিত করা উচিত নয়। পার্টি নেতাদের বক্তব্য, রাহুল গান্ধী এই যাত্রার মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত কথিত দুর্নীতি শুধু বিহারে নয়, বরং পুরো দেশে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।
যাত্রার রাজনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব
এই যাত্রা শুধুমাত্র নির্বাচনী ইস্যুগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিহারের ব্যাপক জনসমষ্টি, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা। মহাজোটের নেতারা মনে করেন যে এই যাত্রা রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে গণতন্ত্রের দৃঢ়তা এবং স্বচ্ছতার দিকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।
যাত্রার সময় নেতারা জলবায়ু, বন্যা এবং অন্যান্য স্থানীয় সমস্যা নিয়েও জনগণের সঙ্গে কথা বলবেন। এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকার ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের পর্যালোচনা করেছিলেন। প্রশাসনকে নদীর ধারের এলাকাগুলিতে সতর্ক থাকতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সময় মতো সাহায্য প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-তে রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের একই মঞ্চে আসা বিহারের রাজনীতিতে মহাজোটের শক্তি ও একতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই যাত্রার সময় রাজ্যের ভোটার অধিকার, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর কেন্দ্র করে বার্তা দেওয়া হবে।