প্রয়াণে স্তব্ধ জাতি, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন শিবু সোরেন
ভারতের রাজনীতির এক যুগসন্ধির অবসান ঘটল। আজ, সোমবার সকালে প্রয়াত হলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (JMM) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বিগত কয়েকদিন ধরে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কিডনি জনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা হলেও, সোমবার সকালে এসেছিল মর্মান্তিক খবর—জীবনের সঙ্গে লড়াই শেষ করেছেন গুরুজি।ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে শিবু সোরেন ছিলেন এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। শুধুমাত্র একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি, অধিকার রক্ষার যোদ্ধা হিসেবে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর মৃত্যু একটি রাজনৈতিক পর্বের সমাপ্তি বলে মেনে নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন মহল।
‘মাটির কাছের নেতা’: প্রধানমন্ত্রীর আবেগঘন শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ তিনি লেখেন, “শিবু সোরেনজি ছিলেন মাটির কাছের নেতা। নিরবচ্ছিন্ন নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি মানুষের পাশে থেকেছেন। বিশেষ করে আদিবাসী সমাজ ও অবহেলিতদের ক্ষমতায়নে তিনি সর্বদা এগিয়ে ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত।” তিনি আরও জানান, শোকবার্তা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন।প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও, শিবু সোরেনের মতো নেতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সর্বজনীন। জনসাধারণের মঙ্গলচিন্তা এবং নীতিনিষ্ঠার প্রতীক হয়ে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
‘ঝাড়খণ্ডের একটি অধ্যায়ের অবসান’: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধাবাক্য
শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, “শিবু সোরেন ছিলেন আমার আদিবাসী ভাই-বোনেদের জন্য ‘গুরু দিশম’। আমি ওঁকে খুব ভালোভাবে চিনতাম। তাঁর প্রয়াণে এক যুগের ইতি ঘটল।” পাশাপাশি, শোক প্রকাশ করে হেমন্ত সোরেন এবং তাঁর পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।মমতার বার্তায় উঠে এসেছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতা এবং আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী রাজনীতির সঙ্গে যেভাবে তিনি শিবু সোরেনকে যুক্ত দেখেন, তা তাঁর ভাষ্যেই স্পষ্ট।
‘এক সাহসিকতার গল্প’: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বার্তায় শিবু সোরেনের জীবনকে ‘এক সাহস, ত্যাগ এবং জনগণের প্রতি অটল বিশ্বাসের গল্প’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লেখেন, শিবু সোরেনজির সংগ্রাম ঝাড়খণ্ডের আত্মাকে গড়ে তুলেছে। তাঁর অনুপস্থিতি এক অপূরণীয় ক্ষতি।অভিষেকের টুইট থেকে বোঝা যায়, রাজনীতির বাইরে একজন আদর্শ নেতার স্বরূপ কীভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে—শিবু সোরেন ছিলেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
শেষপর্যন্ত লড়াইয়ে হার: শারীরিক অসুস্থতা ও হাসপাতালযাপন
বিগত কয়েক মাস ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন শিবু সোরেন। বিশেষ করে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। যদিও চিকিৎসকরা দুই দিন আগে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলেছিলেন, অবশেষে সোমবার সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চিকিৎসকরা চেষ্টা চালালেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি থেকে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভ এই নেতার জীবনাবসান রাষ্ট্রজুড়ে শোকের ছায়া ফেলেছে।
জাতীয় রাজনীতিতে বিরল অধ্যায়ের অন্তিম পরিণতি
শিবু সোরেন শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতিতেই নয়, বরং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একজন আদিবাসী নেতা হিসেবে যে সম্মান ও মর্যাদা তিনি অর্জন করেছিলেন, তা দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর তৈরি করা আদর্শ এবং আন্দোলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।তাঁর মৃত্যুতে শুধু ঝাড়খণ্ডই নয়, গোটা ভারত হারাল এক বিচক্ষণ, সংগ্রামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। গুরুজির মতো নেতা আর সহজে জন্মায় না—এমনটাই বলছেন তাঁর অনুরাগীরা।