হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাস ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত। এই সময়ে ভক্তগণ জল অভিষেক, ব্রত, পূজা এবং ভক্তির মাধ্যমে শিবকে তুষ্ট করেন। মনে করা হয়, শ্রাবণে ভগবান শিব বিশেষভাবে পৃথিবীতে সক্রিয় থাকেন এবং তাঁর ভক্তদের সমস্ত প্রার্থনা শোনেন। এমতাবস্থায়, শ্রাবণ মাস শুরু হওয়ার আগে কিছু বিশেষ জিনিসপত্র বাড়িতে এনে পূজা স্থানে স্থাপন করলে শিবের বিশেষ কৃপা লাভ করা যায়।
নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ বা পারদ শিবলিঙ্গ আনা
শ্রাবণ মাসের শুরুতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা বাড়িতে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ এবং পারদ শিবলিঙ্গকে বিশেষ ফলদায়ী মনে করা হয়।
নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ নর্মদা নদীর প্রবাহে স্বয়ম্ভুভাবে গঠিত হয়, তাই এটিকে স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গের শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। এই শিবলিঙ্গ বাস্তু দোষ, পিতৃ দোষ এবং নেতিবাচক শক্তি দূর করতে সাহায্য করে। এটি বাড়িতে রাখলে মানসিক শান্তি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা আসে।
পারদ শিবলিঙ্গ পারদ দিয়ে তৈরি হয় এবং এটি তান্ত্রিক পূজায় খুব কার্যকরী বলে মনে করা হয়। এটি কেবল গ্রহ দোষ দূর করে না, আকস্মিক ধন লাভ এবং রোগ নিরাময়েও সহায়ক। পারদ শিবলিঙ্গ বাড়ির পূজা স্থানে রাখলে পরিবেশ দিব্য হয়।
রুদ্রাক্ষের মালার গুরুত্ব
রুদ্রাক্ষকে ভগবান শিবের অশ্রু থেকে উৎপন্ন বলে মনে করা হয়। এটি কেবল একটি আধ্যাত্মিক বস্তু নয়, মানসিক শান্তি এবং আত্মিক শান্তির মাধ্যমও বটে। শ্রাবণ শুরু হওয়ার আগে পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষের মালা গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধ করে পূজা স্থানে রাখা উচিত।
রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে মনের চঞ্চলতা কমে, চিন্তাভাবনায় স্থিতিশীলতা আসে এবং মনোযোগ বাড়ে। একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ সাধনা কারীদের এবং যোগীদের জন্য বিশেষ উপযোগী। রুদ্রাক্ষের মালা জপ করলে বাড়িতে ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে।
নাগ দেবতার মূর্তি আনা শুভ
ভগবান শিবের গলায় জড়ানো নাগরাজ বাসুকি তাঁর শক্তি ও ভারসাম্যের প্রতীক। নাগ দেবতার রুপোর, তামার বা পিতলের মূর্তি শ্রাবণ মাসের আগে বাড়িতে এনে পূজা স্থানে স্থাপন করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
এই মূর্তি রাহু-কেতুর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, কালসর্প দোষের শান্তি ঘটায় এবং ভয়, সংকট ও বাধা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। প্রতি সোমবার নাগ দেবতার মূর্তিতে কাঁচা দুধ ও জল অর্পণ করা উপকারী। এটি শিবের প্রভাব বৃদ্ধি করে এবং পারিবারিক জীবনে স্থিতিশীলতা আনে।
শুদ্ধ বিভূতি বা ভস্মের গুরুত্ব
ভগবান শিবকে ভস্ম ধারণকারী দেবতা বলা হয়। তাঁর শরীরে লেগে থাকা বিভূতি কেবল প্রতীকী নয়, সাধককে মায়া-মোহ এবং ভ্রম থেকে বের করে আনে।
শ্রাবণ মাসের আগে বাড়িতে বিভূতি এনে ত্রিপুন্ডের আকারে কপাল, বাহু ও গলায় লাগানো শুভ। এই বিভূতি পবিত্র হোম যজ্ঞের ছাই থেকে তৈরি হওয়া উচিত। এটি লাগালে আত্মিক চেতনা জাগ্রত হয় এবং শিবের অনুভব হয়।
বিভূতি লাগালে সাধকের একাগ্রতা বাড়ে এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এটি শরীর, মন ও আত্মাকে পবিত্র করে এবং ধ্যানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ স্থাপনের বিশেষ ফল
শিবজি শঙ্খধ্বনি অত্যন্ত ভালোবাসেন, তবে দক্ষিণাবর্তী শঙ্খকে বিশেষভাবে শুভ মনে করা হয়। এই শঙ্খ ডান দিকে খোলে এবং এটিকে শিবের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
শ্রাবণ মাসের আগে এই শঙ্খ বাড়িতে স্থাপন করা, বিশেষ করে পূজা স্থানে, বাড়ির নেতিবাচক শক্তি দূর করে। এতে গঙ্গাজল ভরে শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়।
দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ধন বৃদ্ধি, মানসিক শান্তি, রোগ নিরাময় এবং পারিবারিক সুখ লাভ হয়। এর ধ্বনি পরিবেশকে শুদ্ধ করে এবং বাস্তু দোষ দূর করে।