উত্তরপ্রদেশে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এনডিএর সহযোগী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অনুপ্রিয়া পটেলের দল আপনা দল (সোনেলাল)-এ বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইউপি রাজনীতি: উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নতুন করে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এনডিএর সহযোগী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেলের নেতৃত্বে আপনা দল (সোনেলাল) এখন নিজেদের মধ্যেই বিদ্রোহের সম্মুখীন হচ্ছে। মঙ্গলবার দলের পুরনো এবং বহিষ্কৃত নেতারা 'আপনা মোর্চা' নামে একটি নতুন ফ্রন্ট তৈরি করেছেন এবং দাবি করেছেন যে খুব শীঘ্রই দলের ন'জন বিধায়কও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
লখনউয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে আপনা মোর্চার আহ্বায়ক ব্রজেন্দ্র প্রতাপ সিং প্যাটেল বলেন, তাদের মোর্চাই আসল আপনা দল, এবং তিনি সরাসরি অনুপ্রিয়া পটেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। ব্রজেন্দ্র প্যাটেল বলেন, ২০১৭ সালে আমরা দলটিকে রক্ত জল করে তৈরি করেছি, কিন্তু অনুপ্রিয়া প্যাটেল এটিকে হাইজ্যাক করে নিজের স্বামীকে দলের জাতীয় সভাপতি বানিয়েছেন। গত দশ বছরে কোনো অভ্যন্তরীণ নির্বাচনও হয়নি।
ব্রজেন্দ্র প্যাটেল আরও বলেন, অনুপ্রিয়া পটেলের আচরণ পুরোপুরি পরিবারতান্ত্রিক, যার ফলে কুর্মি সমাজের আস্থা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তিনি দাবি করেন যে বর্তমানে ন'জন বিধায়ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং খুব শীঘ্রই তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে এনডিএ-তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
নতুন মোর্চা অনুপ্রিয়া পটেলের জন্য সংকট তৈরি করেছে
প্রেস কনফারেন্সের সময় ব্রজেন্দ্র প্যাটেল আরও একটি বড় বিষয় উত্থাপন করে আপনা দলের প্রতিষ্ঠাতা সোনেলাল পটেলের মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সোনেলাল পটেলের মৃত্যু সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে হয়েছিল এবং এর সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে সত্য জনসমক্ষে আসে। এই মন্তব্য ইউপির রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, কারণ সোনেলাল পটেলের ভাবমূর্তি কুর্মি সমাজে একজন অত্যন্ত সম্মানিত নেতা হিসেবে ছিল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কুর্মি সমাজের মধ্যে এই ধরনের বিভাজন অনুপ্রিয়া পটেলের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। ব্রজেন্দ্র প্যাটেলের মতে, কুর্মি সমাজের একটি বড় অংশ এখন আপনা মোর্চার সঙ্গে রয়েছে এবং যদি ন'জন বিধায়কও তাদের সঙ্গে যোগ দেন, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচনেই নয়, ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও পড়বে।
যদিও এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের ওপর আপনা দল (এস)-এর রাজ্য সভাপতি আরপি গৌতম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদ্রোহী নেতারা স্রেফ সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য বিবৃতি দিচ্ছেন এবং দলে কোনো ভাঙন হবে না। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে এই নেতারা বিরোধীদের ইঙ্গিতে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন।
এনডিএ-তে আসনের সমীকরণেও প্রভাব
যদি সত্যিই ন'জন বিধায়ক আপনা মোর্চার দিকে চলে যান, তাহলে এনডিএর মধ্যে আসন ভাগাভাগি এবং কুর্মি ভোট ব্যাংক এর রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। অনুপ্রিয়া পটেলের আপনা দল (এস) দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে কুর্মি ভোট ব্যাংক ভাগ করে আসছে, কিন্তু যদি এই মোর্চা বিজেপির সঙ্গে জোট করতে সফল হয়, তাহলে অনুপ্রিয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে ইউপিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই এমন রাজনৈতিক উত্থান-পতন এনডিএকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। কুর্মি সম্প্রদায় পূর্বাঞ্চল এবং মধ্য ইউপিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, এবং এই কারণেই বিজেপিও পরিস্থিতির উপর গভীর নজর রাখছে। ব্রজেন্দ্র প্যাটেলের এই দাবি যে তাঁরা "আসল আপনা দলের" প্রতিনিধিত্ব করেন, তা ভবিষ্যতে আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারে, কারণ প্রতীক এবং দলের নামের অধিকার নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।