শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনী অমরসূর্য এই মুহূর্তে ভারত সফরে রয়েছেন। এই সফরে, শুক্রবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করা, উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভারতীয় জেলেদের কল্যাণ সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নয়াদিল্লি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার তাঁর সরকারি বাসভবনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনী অমরসূর্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের ভারত সফরের অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। এই বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, আঞ্চলিক উন্নয়ন, শিক্ষা, উদ্ভাবন, নারী ক্ষমতায়ন এবং ভারতীয় জেলেদের কল্যাণ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে সহযোগিতা
বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী অমরসূর্য ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হন। অমরসূর্য তাঁর ভারত সফরকালে ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (IIT) দিল্লি পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষায় অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
দুই নেতাই মনে করেন যে শিক্ষা ও উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের অগ্রগতির চাবিকাঠি। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ভারতের ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে শ্রীলঙ্কা এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়।
নারী ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়ন
বৈঠকে নারী ক্ষমতায়ন নিয়েও বিশেষভাবে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে ভারত নারীদের শিক্ষা, উদ্যোক্তা এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং ভারত এই অভিজ্ঞতা প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। অমরসূর্য, যিনি নিজেও শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্র থেকে এসেছেন, বলেন যে শ্রীলঙ্কাও ভারতের এই উদ্যোগগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে জেলেদের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত কার্যকলাপ নিয়ে প্রায়শই বিরোধ দেখা যায়। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অমরসূর্য ভারতীয় জেলেদের নিরাপত্তা, জব্দ করা নৌকার ফেরত এবং ঐতিহ্যবাহী মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কল্যাণের বিষয়ে আলোচনা করেন।
দুই নেতাই এই বিষয়ে একমত হন যে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা অপরিহার্য, যাতে উভয় দেশের জেলেদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স (X)’ এ একটি পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন,
'শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনী অমরসূর্যকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। আমাদের বৈঠকে শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন, উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং জেলেদের কল্যাণ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসাবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণ এবং সমগ্র অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'
নিজের ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী অমরসূর্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু কলেজও পরিদর্শন করেন — এটি সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তাঁর প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে তিনি ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। কলেজ প্রশাসন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। ক্যাম্পাস পোস্টার ও স্বাগত ব্যানারে সজ্জিত ছিল। কলেজের অধ্যক্ষ অঞ্জু শ্রীবাস্তব তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান।
অমরসূর্য এই উপলক্ষে বলেন, "হিন্দু কলেজ আমাকে চিন্তা করতে, বুঝতে এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। ভারতে আমার পড়াশোনার দিনগুলি আমার ব্যক্তিত্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।"