সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ: ভালো রাস্তা জীবনের অধিকার, জানালো সুপ্রিম কোর্ট

সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ: ভালো রাস্তা জীবনের অধিকার, জানালো সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে ভালো, সুরক্ষিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা রাস্তা এখন সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবনের অধিকারের অংশ, এবং সরকারের উচিত রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার পরিবর্তে নিজেই নেওয়া।

Supreme Court: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে স্পষ্ট করেছে যে নিরাপদ, টেকসই এবং সুগম রাস্তা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে 'জীবন ধারণের অধিকার'-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই রায় সারা দেশে রাস্তা নির্মাণ এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রশ্ন তুলেছে এবং সরকারগুলিকে এখন বেসরকারি সংস্থাগুলির উপর নির্ভরতা থেকে সরে এসে সরাসরি হস্তক্ষেপের দিকে চিন্তা করতে বাধ্য করেছে।

এই রায়টি মধ্যপ্রদেশ সড়ক উন্নয়ন নিগম এবং উমরি পুফ প্রতাপপুর টোলওয়েজ প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চলমান একটি দীর্ঘ বিরোধ নিষ্পত্তি করার সময় দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি জে. বি. পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর. মহাদেভনের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

বিরোধের শুরু: চুক্তি এবং অনুমান থেকে বেড়ে যাওয়া খরচ

৫ জানুয়ারি ২০১২-এ, মধ্যপ্রদেশ সরকারের অধীনস্থ সড়ক উন্নয়ন নিগম এবং উক্ত বেসরকারি সংস্থার মধ্যে একটি সড়ক প্রকল্পের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে, কোম্পানিকে উমরি-পুফ-প্রতাপপুর রাস্তা নির্মাণ, পরিচালনা এবং পরে রাজ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ₹৭৩.৬৮ কোটি। কিন্তু কোম্পানি পরে দাবি করে যে তারা কাজের সময় অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছে—যেমন কাজে বিলম্ব, পুনরায় ডিজাইন করা এবং অপ্রত্যাশিত খরচ বৃদ্ধি—যার কারণে তাদের মোট খরচ ₹২৮০ কোটিতে পৌঁছেছে। কোম্পানি আরও দাবি করেছে যে তারা পুরো অর্থ পায়নি এবং তাদের ক্ষতি হয়েছে।

বেসরকারি কোম্পানির দাবি এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার চেষ্টা

প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি এবং চুক্তির ধারা উল্লেখ করে, কোম্পানি এই বিরোধটিকে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রেজোলিউশন (ICADR)-এ মধ্যস্থতার জন্য পাঠায়। কোম্পানির ধারণা ছিল যে মামলাটি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার শ্রেণিতে আসে এবং এটি রাজ্যের মধ্যস্থম অধিকরণে শোনা উচিত নয়। কিন্তু, মধ্যপ্রদেশ সড়ক উন্নয়ন নিগম এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে এবং যুক্তি দেয় যে রাজ্যে ১৯৮৩ সালের মধ্যস্থম অধিকরণ আইনের অধীনে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনাল আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত আছে। সেক্ষেত্রে মামলা সেখানেই চালানো উচিত।

হাইকোর্টের রায়

মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট নিগমের পক্ষে রায় দিয়ে ICADR-এর কার্যক্রম বাতিল করে দেয়। আদালত মনে করে যে সড়ক প্রকল্পটি একটি জনস্বার্থের অধীনে করা হচ্ছিল, তাই এর সাথে সম্পর্কিত বিরোধও রাজ্য স্তরেই সমাধান করা উচিত। কোম্পানি এই আদেশটিকে প্রযুক্তিগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে। তাদের দাবি ছিল যে তারা একটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের ‘রাজ্য’ হিসাবে গণ্য করা যায় না, তাই তাদের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন চলতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়

সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে সঠিক ठहराয় এবং বলে যে কোম্পানি বেসরকারি হলেও প্রকল্পের চরিত্র ছিল সার্বজনীন। এই প্রেক্ষাপটে আদালত বলেছে, 'সড়ক শুধুমাত্র যান চলাচলের মাধ্যম নয়, এটি সাধারণ নাগরিকের জীবনের মানের ভিত্তি। ভালো, নিরাপদ এবং চলাচলযোগ্য রাস্তা সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে জীবনের অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।' আদালত আরও বলেছে যে সরকারের উচিত এই ধরনের बुनियादी ढाँचे-র দায়িত্ব বেসরকারি হাতে না দিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। জনসেবা ব্যক্তিগত লাভের জন্য ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

কী বলছে অনুচ্ছেদ ২১?

অনুচ্ছেদ ২১ বলছে: 'আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া অনুসারে ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।' সুপ্রিম কোর্ট এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা করে বলেছে যে জীবনের অর্থ কেবল শ্বাস নেওয়া নয়, সম্মান, নিরাপত্তা এবং সুবিধার সাথে বাঁচাও। এবং একটি ভালো রাস্তা এর মূল ভিত্তি হতে পারে।

রায়ের সুদূরপ্রসারী ফল: সরকারগুলোর জন্য সতর্কতা এবং দিশা

এই রায় থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ভবিষ্যতে রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য জন बुनियादी ढाँचे পুরোপুরি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া শুধুমাত্র আইনি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে না, বরং এটি সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। সরকারগুলোকে এখন পুনর্বিবেচনা করতে হবে যে তারা কী পরিমাণে বেসরকারি ঠিকাদারদের উপর নির্ভর করতে পারে। এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আগামী সময়ে নীতি তৈরি এবং জনসেবার তত্ত্বাবধানে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

Leave a comment