দিল্লির সরোজিনী নগরের পোশাকেই মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন!

দিল্লির সরোজিনী নগরের পোশাকেই মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন সুস্মিতা সেন!

মিস ইন্ডিয়ার খেতাব জেতা প্রত্যেক মডেল এবং যুবতীর স্বপ্ন। এর জন্য বহু বছরের পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং চমৎকার উপস্থাপনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই মঞ্চে কেবল সৌন্দর্যই নয়, ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। 

এন্টারটেইনমেন্ট: দিল্লির বিখ্যাত সরোজিনী নগর মার্কেট যেখানে সাধারণত মানুষ সস্তায় এবং ট্রেন্ডি পোশাক কেনাকাটা করে, সেখান থেকেই একটি ঘটনা বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের কেরিয়ারের খুব বিশেষ অংশ। সুস্মিতা সেন একটি শো-এর সময় নিজেই প্রকাশ করেছিলেন যে ১৯৯৪ সালে যখন তিনি মিস ইন্ডিয়ার খেতাব জিতেছিলেন, সেই সময় তিনি যে পোশাকটি পরেছিলেন, সেটি দিল্লির সরোজিনী নগর মার্কেট থেকে কেনা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, একই বছর তিনি পরবর্তীতে মিস ইউনিভার্সের মুকুটও নিজের নামে করেন এবং ভারতের সম্মান বাড়িয়েছিলেন।

সরোজিনী নগরের সস্তা ড্রেসই হল মিস ইন্ডিয়া 

১৯৯৪ সালে সুস্মিতা সেন মিস ইন্ডিয়ার মুকুট নিজের নামে করেন এবং এরপর মিস ইউনিভার্স হয়ে ভারতের সম্মান বাড়ান। কিন্তু খুব কম লোকই জানে যে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে তিনি যে গাউনটি পরেছিলেন, সেটি দিল্লির বিখ্যাত সরোজিনী নগর মার্কেট থেকে কেনা কাপড় দিয়ে তৈরি ছিল। সুস্মিতা সেন নিজেই ফারুক শেখের জনপ্রিয় টিভি শো "জিনা ইসি কা নাম হ্যায়"-এ এই রহস্যের কথা প্রকাশ করেছিলেন। 

তিনি জানান যে সেই সময় তাঁর আর্থিক অবস্থা এতটাও মজবুত ছিল না যে তিনি ডিজাইনার পোশাক কিনতে পারবেন। প্রতিযোগিতার জন্য চারটি পোশাকের দরকার ছিল, কিন্তু বাজেট ছিল খুবই সীমিত।

সুস্মিতা সেনের মিডল ক্লাস স্ট্রাগল

সুস্মিতা সেন শো-তে বলেছিলেন, "সেই সময় আমার কাছে ডিজাইনার পোশাক কেনার এবং স্টেজে পরার মতো যথেষ্ট টাকা ছিল না। আমরা একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি এবং নিজেদের সীমাবদ্ধতা খুব ভালোভাবে জানতাম।" এমন পরিস্থিতিতে তাঁর মা তাঁকে বুঝিয়েছিলেন যে লোকেরা মঞ্চে তাঁকে দেখতে আসবে, শুধুমাত্র তাঁর পোশাককে নয়। এই কথা সুস্মিতার মন ছুঁয়ে যায়। এরপর তিনি মায়ের সঙ্গে দিল্লির সরোজিনী নগর মার্কেটে যান এবং সেখান থেকে সস্তা কাপড় কেনেন।

এই গল্প এখানেই শেষ হয় না। সুস্মিতা সেন জানান যে তাঁদের বাড়ির নিচে গ্যারাজে বসা একজন সাধারণ দর্জি, যিনি পেটিকোট সেলাই করার জন্য পরিচিত ছিলেন, তিনি সেই কাপড় দিয়ে গাউন তৈরি করেছিলেন। তিনি হেসে বলেছিলেন, "আমরা দর্জি ভাইকে বলেছিলাম যে দেখুন, এই গাউন টিভিতে আসবে, এটা ভালো করে বানিয়ে দেবেন।" এবং সেই গাউনই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় উইনিং আউটফিট প্রমাণিত হয়েছিল।

মিস ইন্ডিয়া থেকে মিস ইউনিভার্স পর্যন্ত যাত্রা

সরোজিনী নগর থেকে কেনা পোশাক পরে মিস ইন্ডিয়া জেতার পর সুস্মিতা সেন সেই আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বের জোরেই মিস ইউনিভার্সের খেতাবও নিজের নামে করেন। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে আসল সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস এবং বুদ্ধি থেকে আসে, শুধুমাত্র দামি পোশাক থেকে নয়। এই কৃতিত্ব ভারতের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল এবং আজও সুস্মিতা সেনের নাম বিশ্ব স্তরে গর্বের সঙ্গে নেওয়া হয়।

এক সময় সরোজিনী নগরের পোশাক পরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলো ছড়ানো সুস্মিতা সেন আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। GQ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তিনি বলিউডের অনেক হিট ছবিতে কাজ করেছেন। তিনি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ওয়েব সিরিজ "আরিয়া"-তেও তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসে খুবই সফল হয়েছেন। 

সুস্মিতা সেন একজন স্বাধীন মহিলা এবং দুই মেয়ের সিঙ্গল মাদার, যিনি তাঁর শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব এবং অনুপ্রেরণামূলক জীবন দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেন। সুস্মিতা সেনের এই গল্প সেই সব মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা মনে করে যে বড় স্বপ্ন পূরণ করার জন্য শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম এবং সঠিক চিন্তা দিয়ে যেকোনো বাধাই অতিক্রম করা যায়।

Leave a comment