ক্রিকেট বিশ্বে টি২০ ফরম্যাটের আগমন ভক্তদের নতুন ধরণের উত্তেজনা দিয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত ওভারের খেলাটি দ্রুতগতির ব্যাটসম্যানদের প্রতিভা তুলে ধরে।
স্পোর্টস নিউজ: ক্রিকেট বিশ্বে টি২০ ফরম্যাট একটি নতুন বিপ্লব এনেছিল। এই স্বল্প-ওভারের খেলাটি দ্রুতগতির ব্যাটসম্যানদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা ম্যাচগুলোকে উত্তেজনাপূর্ণ এবং দর্শকদের জন্য বিনোদনমূলক করে তুলেছিল। আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করা ক্রিস গেইলের ঐতিহাসিক ইনিংসের পুরো ১৮ বছর পূর্ণ হল। গেইলের এই ইনিংস কেবল টি২০ ক্রিকেটের আক্রমণাত্মক শৈলীর জন্মই দেয়নি, বরং তাঁকে 'ইউনিভার্স বস' উপাধিও এনে দিয়েছে।
প্রথম টি২০ সেঞ্চুরির ইনিংস: ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৭
টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচনা হয়েছিল ২০০৫ সালে, কিন্তু প্রথম সেঞ্চুরি আসে দুই বছর পর। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচে গেইল ক্রিকেট ইতিহাসে রচনা করেন। এই ম্যাচটি ছিল প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ ২০০৭-এর অংশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাটিং করে ২০ ওভারে ২০৫/৬ রান তোলে। এই ইনিংসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ক্রিস গেইলের বিস্ফোরক ব্যাটিং। তিনি মাত্র ৫৭ বলে ১১৭ রান করেন।
ক্রিস গেইলের এই ঐতিহাসিক ইনিংসে তিনি ১০টি ছক্কা এবং ৭টি চার মারেন। তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ২০৫-এর বেশি। এই সেঞ্চুরি কেবল টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি করে ইতিহাসই গড়েনি, বরং এটি টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরও প্রথম তিন অঙ্কের স্কোর ছিল। তাঁর দীর্ঘ ছক্কা এবং আক্রমণাত্মক শট দর্শকদের রোমাঞ্চিত করেছিল। এই ইনিংসের সময় গেইল প্রমাণ করেছিলেন যে টি২০ ক্রিকেটে আক্রমণই সাফল্যের চাবিকাঠি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর এবং দলীয় পারফরম্যান্স
গেইলের সেঞ্চুরির সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ওভারে ২০৫/৬ রানের বিশাল স্কোর গড়ে। তাঁর পাশাপাশি ডেভন স্মিথ ৩৫ রান করেন। দলের অন্য খেলোয়াড়রা এই বিশাল স্কোরের মোকাবিলা করতে পারেনি।
- মার্লন স্যামুয়েলস – ৬ রান
- শিভনারায়ণ চন্দরপল – ১১ রান
- ডোয়াইন স্মিথ – ১ রান
- অধিনায়ক রামরেশ সারওয়ান – ১২ রান
তবে, গেইলের বিস্ফোরক ইনিংস প্রতিপক্ষের বোলারদের পুরোপুরি ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্দান্ত চেজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশাল স্কোর সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। অধিনায়ক গ্রেইম স্মিথ, হার্শেল গিবস, এবং জাস্টিন ক্যাম্পের দুর্দান্ত ইনিংসের সাহায্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭.৪ ওভারে ২০৮ রান করে ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতে নেয়।
- গ্রেইম স্মিথ: ২৮ রান (২১ বল)
- এবি ডি ভিলিয়ার্স: ১৬ রান (৯ বল)
- হার্শেল গিবস: ৯০ রান (৫৫ বল, ১৪ চার, ২ ছক্কা)
- জাস্টিন ক্যাম্প: ৪৬ রান (২২ বল, ৫ চার, ২ ছক্কা)
ক্রিস গেইল হলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ
ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারলেও, ক্রিস গেইলের নাম এই ম্যাচের তারকা ছিল। তাঁর বিস্ফোরক পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচন করা হয়। এই ইনিংসটি গেইলকে 'টি২০-এর কিং' বানানোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। তাঁর আক্রমণাত্মক শট বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ভক্ত এবং তরুণ খেলোয়াড়দের প্রভাবিত করেছিল। এই সেঞ্চুরির পর গেইল টি২০ ক্রিকেটে তাঁর পরিচয় 'ইউনিভার্স বস' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।