৫ বছর পর ফের ভারতে ফিরছে টিকটক জল্পনায় সরগরম দেশ!

 ৫ বছর পর ফের ভারতে ফিরছে টিকটক জল্পনায় সরগরম দেশ!

নিষিদ্ধ থেকে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন

২০২০ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ করেই ৫৯টি চীনা অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই তালিকায় ছিল জনপ্রিয় ভিডিও বানানোর প্ল্যাটফর্ম টিকটক। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল দেশের সার্বভৌমত্ব, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার ক্ষতি। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে ফের সেই অ্যাপ নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা।

হঠাৎ অ্যাক্সেসযোগ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট

সম্প্রতি বেশ কিছু ভারতীয় ব্যবহারকারী হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে টিকটকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট আবারও ভারতে খুলছে। এতদিন সেটি ব্লকড ছিল। তবে এখনো পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোরে টিকটক ডাউনলোডযোগ্য নয়। তবুও ওয়েবসাইট চালু হওয়া নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে—তাহলে কি সরকার নীতিগত ছাড়পত্রের পথে হাঁটছে?

৫৯ অ্যাপের তালিকায় টিকটক

যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন শুধু টিকটক নয়, এর সঙ্গে শেয়ারইট, ইউসি ব্রাউজার, ভিগো ভিডিও, কুয়াই, বাইদু ম্যাপ-এর মতো অ্যাপও তালিকায় ছিল। তথ্য প্রযুক্তি আইন (Section 69A) অনুযায়ী এই অ্যাপগুলি ভারতের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। ফলে চীনা সংস্থার ব্যবসায় বড় ধাক্কা লেগেছিল।

তরুণ প্রজন্মের ভরসা ছিল টিকটক

ভারতে টিকটকের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। শহর থেকে গ্রাম—প্রায় সর্বত্রই তরুণ প্রজন্ম ছোট ভিডিও বানাতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করত। অসংখ্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন টিকটকের দৌলতে। নিষিদ্ধ হওয়ার পর এক বড় অংশের কনটেন্ট ক্রিয়েটর যেন হঠাৎ চাকরি হারানো কর্মীর মতো হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে ভিড়লেও আগের সুবিধা আর পাননি।

ভারত-চিন সম্পর্কের নতুন সমীকরণ

ঠিক এই সময়েই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মোড়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও চিন—উভয় দেশের ওপরই শুল্ক আরোপ করেছেন। তার জেরে দিল্লি ও বেজিং আবারও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক সম্পর্কের এই উন্নতি টিকটকের সম্ভাব্য ফেরার পথ সহজ করছে।

ওয়াং ই-এর সফর বাড়াল আশাবাদ

সম্প্রতি চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার বার্তা দেন। পাশাপাশি চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর তরফে মোদিকে SCO সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান।

‘ড্রাগন-এলিফ্যান্ট ট্যাঙ্গো’ মন্তব্য

চীনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত ও চিন একসঙ্গে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত। তিনি এই সম্পর্ককে অভিহিত করেছেন “ড্রাগন-এলিফ্যান্ট ট্যাঙ্গো” হিসেবে। এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর সেই আলোচনার মাঝেই টিকটকের হঠাৎ ওয়েবসাইট খোলা নিয়ে জল্পনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে আলোচনা

যদিও সরকার এখনও টিকটকের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেয়নি, রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। কেউ বলছেন এটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির সঙ্কেত, আবার কেউ মনে করছেন নির্বাচনের আগে তরুণ প্রজন্মকে খুশি করার কৌশল।

প্লে স্টোরে কবে আসবে অ্যাপ?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—যদি সত্যিই টিকটক ফেরে, তবে কবে প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোরে আসবে অ্যাপটি? আপাতত এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। তবে টেক এক্সপার্টরা মনে করছেন, সরকার সবুজ সংকেত দিলেই এটি ফিরতে দেরি হবে না।

কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আশার আলো

ভারতের লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী যারা একসময় টিকটকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, তাদের কাছে এই খবর নিঃসন্দেহে আশার আলো। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন—যদি টিকটক ফেরে, তবে আবারও নিজেদের কনটেন্ট যাত্রা শুরু করবেন।

টিকটকের প্রত্যাবর্তন কি নিশ্চিত?

সব মিলিয়ে বলা যায়, টিকটককে ঘিরে ফের একবার উত্তাল ভারতের ডিজিটাল দুনিয়া। পাঁচ বছর আগে যে অ্যাপকে নিরাপত্তার কারণে বিদায় জানাতে হয়েছিল, সেই অ্যাপ আবারও কি নতুন রূপে ও নতুন চুক্তির মাধ্যমে ফিরতে চলেছে? উত্তর দেবে আগামি কয়েক মাস। তবে এ কথা স্পষ্ট—টিকটক ফিরলে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া অঙ্গনে বড়সড় পরিবর্তন আসবে।

Leave a comment