সল্টলেকের বিজেপি দফতরে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র ও আইনজীবী দেবজিত সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পকে তিনি তীব্র আক্রমণ শানিয়ে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, আসল শ্রমিকদের ভাতা না দিয়ে নির্বাচনী স্বার্থে তৃণমূল কর্মীদের হাতে সরকারি টাকা তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
নবান্নের ঘোষণা ঘিরে শুরু রাজনৈতিক ঝড়
সোমবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ভিনরাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকরা যদি বাংলায় ফিরে আসেন, তবে তাঁদের এককালীন ৫০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এই ভাতার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এই পদক্ষেপে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। কিন্তু বিজেপি এই উদ্যোগকে ভোটের আগে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে।
"করোনা এক্সপ্রেস থেকে শ্রমশ্রী" – তোপ দেবজিতের
দেবজিতের অভিযোগ, “করোনাকালে মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো ট্রেনকে বলেছিলেন করোনা এক্সপ্রেস। আজ সেই শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে ভাতা ঘোষণা করা হচ্ছে। আসলে ভোটের আগে জনগণকে ভাঁওতা দেওয়ার চেষ্টাই চলছে।” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই ভাতার টাকা কোথা থেকে আসবে এবং কোন খাতে তা বরাদ্দ করা হবে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা রাজ্য সরকার দেয়নি।
কেন্দ্রের টাকার তছরুপের অভিযোগ
বিজেপি মুখপাত্র দাবি করেন, এর আগেও কেন্দ্রের টাকা তছরুপ করেছে রাজ্য সরকার। এবারও একই খেলা চলছে। রাজ্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লক্ষ। কিন্তু বিজেপির হিসাব বলছে, অন্তত ৪০ লক্ষ শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করেন। দেবজিতের মতে, শিক্ষার পরিকাঠামো ও কর্মসংস্থানের হাল খারাপ বলে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাতে হয়েছে।
ভাতা নাকি নির্বাচনী ফাঁদ?
“যাঁরা ভিনরাজ্যে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা রোজগার করছেন, তাঁরা কেনই বা বাংলায় ফিরে এসে ৫০০০ টাকার ভাতার জন্য ভিড় জমাবেন?”— প্রশ্ন তোলেন দেবজিত। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার আসল ও নকল শ্রমিক আলাদা করার কোনও স্পষ্ট মানদণ্ডই ঘোষণা করেনি। এর ফলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের টাকা দেওয়ার বদলে ভুল হাতে অর্থ চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ক্যাডারদের হাতে সরকারি টাকা?
সবচেয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যে দেবজিত বলেন, শ্রমশ্রীর নামে এই টাকা আসলে তৃণমূলের ক্যাডারদের হাতেই পৌঁছে যাবে। দুর্গাপুজোর অনুদান থেকে শুরু করে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’— প্রতিটি ক্ষেত্রেই নয়ছয় করেছে এই সরকার। এখন আবার কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা চাইছে, অথচ জনগণের ট্যাক্সের অর্থ ভিন্ন পথে চালান দিচ্ছে।
জনগণের ট্যাক্সের সঠিক ব্যবহার দাবি বিজেপির
দেবজিতের মতে, এই টাকা জনগণের ট্যাক্স থেকে আসছে। তাই স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি। তিনি দাবি করেন, রাজ্যকে জানাতে হবে কোন প্রকল্পে এই অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে এবং কোন মানদণ্ডে শ্রমিকদের বেছে নেওয়া হবে। তাঁর মতে, শুধুমাত্র আর্থিকভাবে অসহায় শ্রমিকরাই এই ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু উচ্চপদস্থ বা স্বচ্ছল চাকুরিজীবীরা এর আওতায় এলে তা প্রকৃত দরিদ্র শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় হবে।
ভাতা নয়, কর্মসংস্থান চাই
বিজেপি মুখপাত্র শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “ভাতা নয়, রাজ্যে আসল কর্মসংস্থান চাই।” তাঁর মতে, ভাতার মতো অস্থায়ী ব্যবস্থা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যতদিন না বাংলায় পর্যাপ্ত শিল্প আসে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, ততদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা শেষ হবে না। তাই ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প আসলে শুধু নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার, বাংলার বাস্তব সমস্যার সমাধান নয়।