জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও শীর্ষ নেতারা হামলার জন্য দায়ী। ইসরায়েল প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
UN Report: ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ইসরায়েল ক্রমাগত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, যাতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। গাজার হাসপাতাল, বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের বড় দাবি
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ (UNHRC) কর্তৃক নিযুক্ত তিন সদস্যের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দল তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ইসরায়েল গাজায় "Genocide" অর্থাৎ গণহত্যা চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই অভিযান কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং একটি সংগঠিত গণহত্যার মতো।
প্রতিবেদনের মূল निष्कर्ष
তিন সদস্যের দলটি গভীর গবেষণা ও নথিপত্রের বিশ্লেষণের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হারজোগ এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালাণ্টের বিরুদ্ধে গণহত্যায় উস্কানি দেওয়ার মতো বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে, দলটি স্পষ্ট করেনি যে অন্য কোনো ইসরায়েলি নেতাও এমন কিছু করেছেন কিনা।
৭২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন এবং Genocide Convention
স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের এই প্রতিবেদনটি ৭২ পৃষ্ঠার। এতে বলা হয়েছে যে অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল কমপক্ষে তিন থেকে চারবার এমন অভিযান চালিয়েছে, যা ১৯৪৮ সালের Genocide Convention-এর অধীনে "গণহত্যা" হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দলটি আরও বলেছে যে এই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং আনুষ্ঠানিক তদন্তের অংশ।
এটি কি জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক মতামত?
এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধীনে কাজ করা একটি কমিশনের। তবে, এটিকে জাতিসংঘের (UN) আনুষ্ঠানিক মতামত হিসেবে গণ্য করা হবে না। অর্থাৎ, এটি বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন সিদ্ধান্ত। ইসরায়েল এই কমিশনের সাথে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছে এবং এটিকে "ইসরায়েল-বিরোধী ও পক্ষপাতদুষ্ট" বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলি সরকারের মতে, এই প্রতিবেদনটি "মিথ্যা ও বিকৃত তথ্যের" উপর ভিত্তি করে তৈরি। তাদের অভিযোগ, মানবাধিকার পরিষদ ও এই কমিশন আগে থেকেই ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান নিয়ে আসছে, তাই এর বিশ্বাসযোগ্যতা সন্দেহজনক।
আমেরিকার অবস্থান
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আমেরিকাও দীর্ঘকাল ধরে এই বিবাদে ইসরায়েলের সমর্থন করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় আমেরিকা মানবাধিকার পরিষদ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এই কারণেই আমেরিকা এই প্রতিবেদনটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা সিটিতে একটি বড় "Extended Operation" শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। সেনাবাহিনীর মতে, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হামাসের সামরিক ঘাঁটি ও অবকাঠামো ধ্বংস করা। ইসরায়েল গত এক মাস ধরে স্থানীয় জনগণকে গাজা সিটি খালি করার জন্য সতর্ক করছিল।