এস সি ও (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে ভারত, চীন এবং রাশিয়া মার্কিন শুল্ক (tariff) চাপের মুখে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে একজোট হওয়ার পরিচয় দিয়েছে। এই তিন দেশের সম্মিলিত জিডিপি (GDP) ৫৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার, বৈদেশিক রিজার্ভ (foreign exchange reserves) ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা ৩.১ বিলিয়ন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই জোট আমেরিকার আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
এস সি ও শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫: চীনের তিয়ানজিনে শুরু হওয়া এস সি ও শীর্ষ সম্মেলনে ভারত, চীন এবং রাশিয়া এক মঞ্চে এসেছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদী, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকার শুল্ক চাপ নিয়ে একটি যৌথ কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ভারত সহ বিভিন্ন দেশের উপর আরোপিত ভারী করের (tax) পরিপ্রেক্ষিতে এই অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রায় ৫৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্মিলিত জিডিপি এবং ৩.১ বিলিয়ন জনসংখ্যা সহ এই ত্রয়ী বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বহু-মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার (multipolar system) দিকে ইঙ্গিত করে। তবে, চীন ও রাশিয়ার সাথে এই জোট ভারতের জন্য সুযোগের পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে।
সাংহাই সম্মেলনে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মিলন
চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনে ২০টি দেশের নেতারা যোগ দিয়েছেন। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন একসঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের সময় শি জিনপিং বলেন যে ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা সঠিক পথ। রাশিয়াও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে ভারত ও চীনের সঙ্গে জ্বালানি (energy) এবং নিরাপত্তা (security) ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করা তার অগ্রাধিকার।
মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক (import duty) আরোপ করেছে। এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের (exporters) উপর চাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এস সি ও মঞ্চ ভারতের জন্য আশার আলো হতে পারে। ফিনোক্রেট টেকনোলজিসের সিইও (CEO) গৌরব গোয়েল বলেছেন যে ভারত এখন ছাড়ের জন্য আমেরিকার উপর নির্ভর করবে না, বরং প্রতিবেশী ও মিত্র দেশগুলোর সাথে নতুন বাণিজ্য পথ (trade routes) উন্মুক্ত করবে। চীন ও রাশিয়াও ভারতের জন্য তাদের অর্থনীতিকে আরও উন্মুক্ত করছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে জ্বালানি, পরিকাঠামো (infrastructure) এবং ডিজিটাল পেমেন্টের (digital payment) মতো ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিন দেশের সম্মিলিত জিডিপি
ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ৫৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি বিশ্বের মোট অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডারের (foreign exchange reserves) কথা বললে, তাদের কাছে ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী রিজার্ভের ৩৮ শতাংশ। জনসংখ্যার দিক থেকে দেখলে, এই তিন দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৩.১ বিলিয়ন। এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ।
সামরিক (military) দিক থেকেও এই ত্রয়ী শক্তিশালী। বিশ্বের মোট প্রতিরক্ষা ব্যয়ের (defense spending) এক পঞ্চমাংশ একাই এই তিন দেশ করে। তিন দেশের মিলিত সামরিক বাজেট প্রায় ৫৪৯ বিলিয়ন ডলার। জ্বালানি ভোগেও (energy consumption) তাদের অংশীদারিত্ব ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
তিন দেশের পৃথক শক্তি
চীন উৎপাদন (manufacturing) ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতা হিসেবে বিবেচিত হয়। রাশিয়া জ্বালানি ক্ষেত্রে তার আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং ভারত পরিষেবা (services) ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করছে। এই তিন দেশের শক্তি যদি একে অপরের সাথে যুক্ত হয়, তবে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ভারসাম্য আমেরিকার বিরুদ্ধে ঝুঁকে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মডেল বিশ্বকে এক-মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থা থেকে বহু-মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে।
ভারতের জন্য আমেরিকার গুরুত্ব
তবে, ভারতের অর্থনীতির জন্য আমেরিকা এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালে ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি ছিল ৭৭.৫ বিলিয়ন ডলার। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১২.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮.৩ শতাংশ বেশি। এর অর্থ হল আমেরিকা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার (trade partner)।
চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
ভারতের জন্য চীন ও রাশিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব সহজ নয়। চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ (border dispute) এবং পাকিস্তানের প্রতি তাদের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার ঝোঁক চীনের দিকে বেশি হওয়ায় ভারতকে প্রায়শই ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। এর পরেও, এস সি ও সম্মেলন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারত, চীন ও রাশিয়া মার্কিন শুল্ক চাপ এড়াতে একসাথে আসছে।