উত্তরাখণ্ড অভিন্ন দেওয়ানি বিধি: বিবাহ নিবন্ধন এবং লিভ-ইন সম্পর্ক আইনে নতুন সংশোধন

উত্তরাখণ্ড অভিন্ন দেওয়ানি বিধি: বিবাহ নিবন্ধন এবং লিভ-ইন সম্পর্ক আইনে নতুন সংশোধন

উত্তরাখণ্ডে কার্যকর হওয়া অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি)-তে সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, এখন বিবাহের নিবন্ধন এক বছরের মধ্যে করানো যাবে। পাশাপাশি কিছু ধারায় শাস্তির বিধান আরও কঠোর করা হয়েছে।

দেরাদুন: উত্তরাখণ্ড সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে (ইউনিফর্ম সিভিল কোড - ইউসিসি) গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন এনেছে। মঙ্গলবার বিধানসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি উত্তরাখণ্ড সংশোধন আইন ২০২৫ পেশ করা হয়েছে, যা বুধবার পাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বিধানে বিবাহ নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো থেকে শুরু করে লিভ-ইন সম্পর্কে প্রতারণা করা ব্যক্তিদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হল আইনকে আরও বেশি ব্যবহারিক করে তোলা এবং সমাজে স্বচ্ছতা আনা।

বিবাহ নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধি

আগে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছয় মাস ছিল, যা এখন এক বছর করা হয়েছে। এর মানে হল, ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে এই আইন লাগু হওয়ার পর থেকে হওয়া বিবাহগুলি এখন এক বছর পর্যন্ত নিবন্ধিত করা যাবে। যদি কোনও ব্যক্তি এই সময়ের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন না করান, তবে তার উপর জরিমানা এবং শাস্তি উভয়ের বিধানই প্রযোজ্য হবে।

এছাড়াও আপিল প্রক্রিয়া, ফি নির্ধারণ এবং সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে উপস্থাপনের মতো প্রক্রিয়াগুলিকেও আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে নাগরিকদের বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সুবিধা হবে এবং আইনি জটিলতা কমবে।

লিভ-ইন সম্পর্ক নিয়ে কড়া আইন

সংশোধিত আইনে লিভ-ইন সম্পর্ক সম্পর্কিত বিধানগুলিকে আরও কঠোর করা হয়েছে। ধারা ৩৮০(২): যদি কোনও ব্যক্তি আগে থেকে বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতারণার মাধ্যমে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকেন, তবে তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা দিতে হবে। তবে, এই বিধান তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না যারা লিভ-ইন সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছেন, অথবা যাদের সঙ্গী সাত বছর বা তার বেশি সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।

এছাড়াও যদি কোনও ব্যক্তি পূর্বের বিবাহ বিচ্ছেদ না করে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকেন, তবে তাকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ধারা ৮২-এর অধীনে শাস্তি দেওয়া হবে, যেখানে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।

সম্মতি এবং প্রতারণা সম্পর্কিত বিধান

অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ধারা ৩৮৭-তে নতুন উপধারা যোগ করা হয়েছে। এর অধীনে যদি কোনও ব্যক্তি বলপ্রয়োগ, চাপ অথবা প্রতারণার মাধ্যমে অন্য কোনও ব্যক্তির সম্মতি নিয়ে সহবাস সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে তাকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানার শাস্তি দেওয়া হবে। এই সংশোধন মহিলা এবং দুর্বল শ্রেণীর সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

সরকারের বক্তব্য, এই বিধানগুলির মাধ্যমে সম্পর্কে স্বচ্ছতা আসবে এবং প্রতারণার ঘটনাগুলি বন্ধ হবে। এই সংশোধন আইনে দুটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে:

  • ধারা ৩৯০-ক: বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, লিভ-ইন সম্পর্ক অথবা উত্তরাধিকার সম্পর্কিত নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতা রেজিস্ট্রার জেনারেলকে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তন প্রশাসনিক স্তরে স্বচ্ছতা আনতে এবং বিবাদ মেটাতে সহায়ক হবে।
  • ধারা ৩৯০-খ: আইনে আরোপিত জরিমানার আদায় ভূমি-রাজস্ব বকেয়া হিসেবে করা হবে। অর্থাৎ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করা হবে যাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর হয়।

যেখানে আগে দণ্ড প্রক্রিয়া সংহিতা (সিআরপিসি) লেখা ছিল, সেটিকে সংশোধন করে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) করা হয়েছে। কিছু জায়গায় ‘পেনাল্টি’-র বদলে ভুল করে ‘শুল্ক’ লেখা হয়েছিল, যেটিকে এখন সংশোধন করে সঠিক করা হয়েছে। এই সংশোধনগুলি আইনের ব্যাখ্যাকে সহজ এবং স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।

Leave a comment