জয়েন্ট রেজ়াল্ট ও ভর্তি জটরাজ্যপালের দ্বারস্থ শুভেন্দু ওবিসি মামলা ঘিরে অনিশ্চয়তা

জয়েন্ট রেজ়াল্ট ও ভর্তি জটরাজ্যপালের দ্বারস্থ শুভেন্দু ওবিসি মামলা ঘিরে অনিশ্চয়তা

সুপ্রিম কোর্টে শুনানি না হওয়ায় অচলাবস্থা

সোমবারও ওবিসি সংরক্ষণ মামলার শুনানি হয়নি সুপ্রিম কোর্টে। ফলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। স্নাতক পর্যায়ে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ৪৬০টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ ও ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মেধাতালিকা প্রকাশ আটকে গিয়েছে। একই কারণে রাজ্য জয়েন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়েও তৈরি হয়েছে তীব্র বিভ্রান্তি।

রাজভবনে বিরোধী দলনেতার কড়া বার্তা

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি জানান, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তাই রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ জরুরি। শুভেন্দুর দাবি, রাজ্যপাল তাঁকে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন এবং মঙ্গলবারই রাজ্য সরকার ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের রিপোর্ট তলব করবেন।

বিকাশ ভবনে ধর্নার হুঁশিয়ারি

শুভেন্দু অধিকারী এদিন স্পষ্ট জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই জয়েন্টের ফল ও ভর্তি সংক্রান্ত জট খুলতে হবে। না হলে আগামী সপ্তাহে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে বিকাশ ভবনে দিনভর ধর্নায় বসবেন তিনি। শুধু তাই নয়, এবিভিপিও একই দাবিতে বিকাশ ভবনে আন্দোলন শুরু করেছে। বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, সরকারের উদাসীনতায় লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী ক্ষতির মুখে পড়ছে।

“সরকারি কলেজে ভর্তি বন্ধ, বেসরকারি কলেজে খোলা দরজা”

রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে তিন মাস আগে। অথচ এখনও জয়েন্টের ফল বা স্নাতকের মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়নি। সরকারি ও সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলো ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে দিয়েছে, কিন্তু বেসরকারি কলেজে ভর্তি চলছে পুরো দমে। তাঁর অভিযোগ, সরকারের এই নীতি ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি শিক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি নয়, আঙুল মুখ্যমন্ত্রীর দিকে

অবাক করার মতোভাবে বিরোধী দলনেতা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে দায়ী করেননি। শুভেন্দুর বক্তব্য, ভর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কোনো সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা নেই। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তাই ভর্তি ও জয়েন্টের ফল আটকে থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

“ওবিসি সংরক্ষণের নামে হাজার কোটি ব্যবসা”

শুভেন্দু অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবৈধভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ওবিসি সংরক্ষণের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সির নজরদারির কারণে চিটফান্ড ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার শিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ তোলার ব্যবস্থা করছে সরকার।

ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

শুভেন্দুর কটাক্ষ, দেশের অন্যান্য রাজ্যে ভর্তি হয়ে ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ বাংলার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ওবিসি মামলার জটিলতায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ৭৬টি ওবিসি–ভুক্ত মুসলিম গোষ্ঠীকে সুযোগ করে দিতেই ভর্তি প্রক্রিয়া ও জয়েন্টের ফল প্রকাশ আটকে রেখেছেন। এর ফলে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে।

আইনি পথে আন্দোলনের ইঙ্গিত

শুভেন্দু আরও জানান, যদি পুলিশ প্রশাসন বিকাশ ভবনে ধর্নার অনুমতি না দেয়, তবে তিনি হাইকোর্টে যাবেন। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে এই ইস্যুটি আগামী দিনে আরও জোরালো হতে চলেছে। তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি শেষ অবধি লড়াই করবেন।

Leave a comment