বীরভূম জেলার বোলপুরে অবস্থিত শান্তিনিকেতন: প্রতি উইকএন্ডে এখন কলকাতাসহ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করছেন এখানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই, তার পাশাপাশি স্থানীয় হস্তশিল্প, কাঁথা, বাটিক, খোয়াই হাট এবং কঙ্কালিতলা মন্দির মিলিয়ে এই শহর এখন হয়ে উঠেছে বাংলার অন্যতম প্রিয় সাংস্কৃতিক গন্তব্য।
কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
শান্তিনিকেতনের প্রাণকেন্দ্র বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের প্রতিফলন। শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতের এক অপূর্ব মেলবন্ধন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়। ইউনেস্কো ইতিমধ্যেই এর একাধিক স্থানকে ‘World Heritage Site’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখন এই ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতেই শান্তিনিকেতন আসছেন।
স্থানীয় শিল্পের মেলায় রঙিন খোয়াই হাট
সোনাঝুরি খোয়াই হাট আজ শান্তিনিকেতনের পর্যটনের মূল প্রাণ। প্রতি সপ্তাহান্তে এই হাটে বসে লোকশিল্প, হস্তশিল্প ও বাউলগানের আসর। নিছক কয়েকজন স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই হাট এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছে। বিদেশি পর্যটকরাও এই হাটে এসে মাটির পুতুল, টেরাকোটা ও বাটিক শাড়ি সংগ্রহ করেন।
কঙ্কালিতলা সতিপীঠের পুণ্যধাম
বোলপুরের কাছেই অবস্থিত বিখ্যাত কঙ্কালিতলা মন্দির, যা সতিপীঠগুলির মধ্যে অন্যতম। বলা হয়, এখানে দেবী সতীর কঙ্কাল পড়েছিল। ভক্তদের ভিড়ে সারাবছর জমজমাট এই মন্দির, যা ধর্মীয় পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবেও শান্তিনিকেতনের গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
কোপাই নদীর শান্ত আবেশে প্রকৃতির রূপ
শান্তিনিকেতন শুধু সাহিত্য বা সংস্কৃতির স্থান নয়, প্রকৃতির কোলে এক শান্ত আশ্রয়ও বটে। কোপাই নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা, কিংবা গ্রামীণ বাংলার মাটির ঘরে থাকা—এই অভিজ্ঞতা এক অন্যরকম মানসিক প্রশান্তি দেয়। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি খুঁজতে এই জায়গা আদর্শ।
উৎসব, ঋতু ও রঙের শহর
বছরভর উৎসবের আবহে মুখর শান্তিনিকেতন। পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব, বা বর্ষা ঋতুর ফোটাফুল—প্রতিটি ঋতুতেই শহর বদলে যায়। সেই ঋতুবদলের রঙ দেখতে বারবার ছুটে আসেন পর্যটকেরা।
বোলপুর শান্তিনিকেতন মানেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি, কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয় এর আকর্ষণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এখানে রয়েছে খোয়াই হাট, কঙ্কালিতলা মন্দির ও স্থানীয় হস্তশিল্পের সমৃদ্ধ জগৎ, যা এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মন জয় করছে।