উৎসবের আগে যোগীর কড়া নির্দেশ: আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও 'স্বদেশী দীপাবলি'তে জোর

উৎসবের আগে যোগীর কড়া নির্দেশ: আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও 'স্বদেশী দীপাবলি'তে জোর

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দীপাবলি এবং আসন্ন উৎসবগুলিকে ঘিরে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে পুলিশ এবং গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে সতর্ক রাখা হোক, যাতে কোনো অরাজক উপাদান পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে। যোগী "স্বদেশী হোক দীপাবলি" স্লোগান দিয়ে নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং আইন-শৃঙ্খলার ওপর বিশেষ মনোযোগ দিতে বলেছেন।

গোরখপুর: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আসন্ন উৎসব-পার্বণের প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে দীপাবলি এবং অন্যান্য উৎসবের সময় আইন-শৃঙ্খলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে সতর্ক অবস্থায় রাখা হোক। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে "স্বদেশী হোক দীপাবলি" কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারত এবং শক্তিশালী উত্তরপ্রদেশের সংকল্প। তিনি পরিচ্ছন্নতা, যান চলাচল, নিরাপত্তা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে অযোধ্যার দীপ উৎসব এবং কাশীর দেব দীপাবলি শান্ত ও আনন্দময় পরিবেশে সম্পন্ন হয়।

স্বদেশী দীপাবলিতে জোর

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে এই বছরের দীপাবলি যেন স্বদেশী পণ্য ব্যবহার করে উদযাপন করা হয়। তিনি বলেছেন যে প্রতিটি পরিবার উৎসবের সময় কিছু না কিছু কেনাকাটা করে এবং এইবার সেই কেনাকাটা স্বদেশী পণ্যের হওয়া উচিত। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে "স্বদেশী হোক দীপাবলি" কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারত এবং শক্তিশালী উত্তরপ্রদেশের দিকে একটি সম্মিলিত সংকল্প।

যোগী আদিত্যনাথ নির্দেশ দিয়েছেন যে ১০ অক্টোবর থেকে প্রতিটি জেলায় স্বদেশী মেলার আয়োজন করা হোক। এর মাধ্যমে মানুষকে স্বদেশী পণ্য কিনতে উৎসাহিত করা হবে এবং বিক্রেতাদের স্বদেশী পণ্য বিক্রি করতে উৎসাহিত করা হবে।

আইন-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা

মুখ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের বলেছেন যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসনের পদাধিকারীরা মাঠে সক্রিয় থাকুন। তিনি বলেছেন যে গত মাসে দুর্গাপূজা, মিশন শক্তি এবং দশেহরার আয়োজন প্রশাসন ও পুলিশের দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে উত্তরপ্রদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সুদৃঢ় হয়েছে।

তিনি বলেছেন যে আসন্ন উৎসবগুলিও আমাদের কর্মদক্ষতা এবং সতর্কতাকে প্রমাণ করার সুযোগ। অরাজক উপাদানদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হোক এবং আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।

অক্টোবর ও নভেম্বরে হবে অনেক উৎসব

মুখ্যমন্ত্রী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলা প্রধান উৎসবগুলির উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে নরক চতুর্দশী, দীপাবলি, গোবর্ধন পূজা, ভাই ফোঁটা এবং লোক মহাপর্ব ছট। তিনি বলেছেন যে এই উৎসবগুলি কেবল আনন্দোৎসব নয়, বরং আমাদের লোক-সংস্কৃতি এবং সম্মিলিত চেতনার প্রতীক।

মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে অযোধ্যা এবং কাশীর উৎসবগুলি এমনভাবে আয়োজন করা হোক যাতে নিরাপত্তা, শান্তি এবং আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত থাকে। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এবং পর্যটক এই আয়োজনগুলিতে অংশ নেন। এমন পরিস্থিতিতে যান চলাচল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।

গোয়েন্দা ব্যবস্থা এবং পুলিশ সক্রিয়

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে উৎসবের সময় অসামাজিক ও অরাজক উপাদানগুলি নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখতে এবং পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে রাজ্যের শান্তি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করা হোক।

পরিবেশ এবং বাজি সুরক্ষা

যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন যে দীপাবলির সময় লক্ষ্মী প্রতিমার বিসর্জন নদীতে নয়, পুকুরে করানো হোক যাতে জলের পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে। তিনি বাজি বিক্রেতাদের দোকান এবং গুদামগুলিকে জনবসতি থেকে দূরে রাখতে, পর্যাপ্ত ফায়ার টেন্ডারের ব্যবস্থা করতে এবং ক্ষতিকারক বাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।

খাদ্য নিরাপত্তা এবং ভেজালের ওপর কড়া নজরদারি

মুখ্যমন্ত্রী এফএসডিএ এবং জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে দুধ, খোয়া, পনির, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল যেন না হয়। খাদ্যদ্রব্যের পরীক্ষা দ্রুত করা হোক। কোনো ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার ওপর যেন হয়রানি না হয়। দোষী প্রমাণিত হলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

সোশ্যাল মিডিয়া এবং গুজবগুলির ওপর নজর

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাতিগত ও ধর্মীয় অনুভূতিতে উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনি ড্রোন সংক্রান্ত গুজবগুলির ওপর স্বরাষ্ট্র বিভাগকে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। জুম্মার নামাজের পর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হোক।

পরিচ্ছন্নতা এবং আলোকসজ্জা

মুখ্যমন্ত্রী নগর সংস্থা এবং জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে উৎসবের আগে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হোক। রাস্তা এবং গলিগুলি পরিষ্কার এবং আলোকিত হোক। জল জমে থাকা এবং আবর্জনার সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হোক। শহর ও ছোট শহরগুলিতে স্পাইরাল লাইট লাগানো হোক যাতে উৎসবের পরিবেশ মনোরম হয়।

মুখ্যমন্ত্রী প্রধান ধর্মীয় স্থান এবং পূজা স্থানগুলিতে যান চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ এবং ট্রাফিক বিভাগ পারস্পরিক সমন্বয় সাধন করে ব্যবস্থাগুলি নিশ্চিত করুক।

Leave a comment