১২ জ্যোতির্লিঙ্গ: ভগবান শিবের এই ১২টি পবিত্র জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন জীবনে একবার অবশ্যই করা উচিত। ধারণা করা হয়, এই তীর্থস্থানগুলির দর্শনে পাপ দূর হয়, মানসিক শান্তি আসে এবং মোক্ষ লাভ সম্ভব হয়।
ভারতে শিব ভক্তির ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। ভগবান শিবকে রুদ্র, মহাদেব, ভোলেনাথ-এর মতো বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। শিব পুরাণ এবং অন্যান্য পৌরাণিক গ্রন্থে ভগবান শিবের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেগুলি শিবের প্রধান তীর্থ এবং রূপ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে শিব পুরাণে এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের পাশাপাশি তাদের উপলিঙ্গগুলিরও বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলি শিবের আরও একটি বিশেষ উপস্থিতির প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়?
এই উপলিঙ্গগুলি জানা এবং তাদের সম্পর্কে বোঝা শিব ভক্তদের জন্য একটি গভীর এবং ধর্মীয় যাত্রার অভিজ্ঞতা হতে পারে। আসুন জেনে নিই কোন কোন জ্যোতির্লিঙ্গের উপলিঙ্গের বর্ণনা পাওয়া যায় এবং সেগুলি কোথায় অবস্থিত বলা হয়েছে।
১২ জ্যোতির্লিঙ্গের তথ্য
ভারতে প্রতিষ্ঠিত ১২টি প্রধান জ্যোতির্লিঙ্গের নাম হল সোমনাথ, মল্লিকার্জুন, মহাকালেশ্বর, ওঙ্কারেশ্বর, কেদারনাথ, ভীমশংকর, কাশী বিশ্বনাথ, ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বরম এবং ঘৃষ্ণেশ্বর। এই স্থানগুলিকে শিবের প্রধান বাসস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বলা হয় যে এগুলির যাত্রায় মোক্ষ লাভ হয়।
উপলিঙ্গগুলির উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়
শিব মহাপুরাণের কোটিরুদ্র সংহিতায় জ্যোতির্লিঙ্গগুলির উপলিঙ্গের উল্লেখ আছে। যদিও এতে কেবল ৯টি জ্যোতির্লিঙ্গের উপলিঙ্গ বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বেশ্বর (কাশী), ত্র্যম্বক (ত্র্যম্বকেশ্বর) এবং বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের উপলিঙ্গের বর্ণনা এতে পাওয়া যায় না। অবশিষ্ট ৯টির উপলিঙ্গের তথ্য নিচে দেওয়া হল:
১. সোমনাথের উপলিঙ্গ: অন্তকেশ্বর
সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের সাথে সম্পর্কিত উপলিঙ্গের নাম অন্তকেশ্বর বলা হয়েছে। এর স্থান মাহি নদী এবং সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এই স্থানটি পাপ নাশ করে এবং অন্তিম সময়ে মুক্তি এনে দেয় বলে মনে করা হয়।
২. মল্লিকার্জুনের উপলিঙ্গ: রুদ্রেশ্বর
মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ থেকে আবির্ভূত রুদ্রেশ্বর নামক উপলিঙ্গ ভৃগুকক্ষ ক্ষেত্রে অবস্থিত বলে বর্ণিত হয়েছে। এর বৈশিষ্ট্য হল এটি সাধকদের সুখ ও শান্তি প্রদান করে।
৩. মহাকালেশ্বরের উপলিঙ্গ: দুগ্ধেশ্বর
মহাকালেশ্বরের উপলিঙ্গের নাম দুগ্ধেশ্বর বা দুধনাথ। এটি নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। এর পূজা সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তি এনে দেয় বলে বর্ণিত আছে।
৪. ওঙ্কারেশ্বরের উপলিঙ্গ: কর্দমেশ্বর
ওঙ্কারেশ্বর থেকে উৎপন্ন উপলিঙ্গ কর্দমেশ্বর বা কর্মদেশ নামে পরিচিত। এটি বিন্দুসরোবরে অবস্থিত বলা হয় এবং এই উপলিঙ্গ সমস্ত কামনা পূর্ণ করে।
৫. কেদারনাথের উপলিঙ্গ: ভূতেশ্বর
কেদারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ থেকে উৎপন্ন উপলিঙ্গ ভূতেশ্বর নামে পরিচিত। এর স্থান যমুনাতটে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। এটি সাধকদের সবচেয়ে বড় পাপও নাশ করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়।
৬. ভীমশঙ্করের উপলিঙ্গ: ভীমেশ্বর
ভীমশঙ্কর থেকে নির্গত উপলিঙ্গ ভীমেশ্বর নামে প্রসিদ্ধ। এটি সহ্যাদ্রী পর্বতে অবস্থিত বলা হয়। এর পূজা বল এবং মনোবলের বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়।
৭. নাগেশ্বরের উপলিঙ্গ: ভূতেশ্বর
নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গের সাথে সম্পর্কিত উপলিঙ্গের নামও ভূতেশ্বর, যা মল্লিকা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এর দর্শন পাপের সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটায়।
৮. রামেশ্বরমের উপলিঙ্গ: গুপ্তেশ্বর
রামনাথস্বামী বা রামেশ্বরম থেকে আবির্ভূত উপলিঙ্গ গুপ্তেশ্বর নামে পরিচিত। এই স্থানটি রহস্যময় বলে মনে করা হয় এবং এর পূজা সকল প্রকার দৈহিক ও মানসিক কষ্ট দূর করে।
৯. ঘৃষ্ণেশ্বরের উপলিঙ্গ: ব্যাঘ্রেশ্বর
ঘৃষ্ণেশ্বরের সাথে সম্পর্কিত উপলিঙ্গ ব্যাঘ্রেশ্বর নামে পরিচিত। এই উপলিঙ্গ সেই সাধকদের জন্য বিশেষ ফলদায়ী, যারা কঠিন ব্রত ও তপস্যা করেন।
যেসব উপলিঙ্গের বর্ণনা পাওয়া যায় না
যেমনটি শিব পুরাণে বলা হয়েছে, বিশ্বেশ্বর (কাশী), ত্র্যম্বকেশ্বর এবং বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের উপলিঙ্গগুলির বর্ণনা গ্রন্থে পাওয়া যায় না। যদিও কিছু পণ্ডিত এদের সাথে সম্পর্কিত উপলিঙ্গ চিহ্নিত করেছেন।
- বিশ্বেশ্বরের উপলিঙ্গ হিসাবে শরণ্যেশ্বরকে মনে করা হয়।
- ত্র্যম্বকেশ্বরের উপলিঙ্গ হিসাবে সিদ্ধেশ্বরের উল্লেখ পাওয়া যায়।
- বৈদ্যনাথের উপলিঙ্গ হিসাবে বৈজনাথকে মনে করা হয়।
এই স্থানগুলির সত্যতা গ্রন্থে নিশ্চিত করা হয়নি, তবে স্থানীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস অনুসারে এগুলির পূজা করা হয়।