প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদম্বরম প্রকাশ করেছেন যে ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিদেশী চাপে সিদ্ধান্ত আটকে রাখার অভিযোগ এনেছেন এবং স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন। এই বিবৃতি জাতীয় সুরক্ষার উপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
New Delhi: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদম্বরমের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চিদম্বরম একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন যে ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের উপর পাল্টা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে, কথিত আছে যে কোনো বিদেশী চাপের (foreign pressure) কারণে এই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছিল। এই প্রকাশ্য তথ্য জাতীয় সুরক্ষা (national security) এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
মোদী বলেছেন যে ২৬/১১ এর হামলাগুলি কেবল মুম্বাই নয়, সমগ্র দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। মুম্বাই, যাকে প্রায়শই ভারতের অর্থনৈতিক পরাশক্তি এবং অন্যতম প্রাণবন্ত শহর বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে সন্ত্রাসীদের দ্বারা লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য শুধু শহরের ক্ষতি করা ছিল না, বরং দেশের হৃদয়ে আঘাত করা ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে এই হামলা ভারতের জাতীয় সুরক্ষাকে গুরুতরভাবে চ্যালেঞ্জ করেছিল।
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোদীর অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন যে সরকার “দুর্বলতার বার্তা” দিয়েছে এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মোদী যুক্তি দিয়েছেন যে সেনাবাহিনী পাকিস্তানের উপর হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, কিন্তু বিদেশী চাপ এবং কূটনৈতিক কারণে এই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন যে এটি কেবল সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, দেশবাসীর অনুভূতি এবং জাতীয় মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি গুরুতর বিষয়।
মোদী স্পষ্ট করেছেন যে চিদম্বরমের এই প্রকাশ দেশের সামনে এই প্রশ্ন তুলেছে যে কে এবং কোন ভিত্তিতে বিদেশী চাপে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। তিনি কংগ্রেসের কাছে দাবি করেছেন যে তারা যেন স্পষ্টভাবে জানায় কোন দেশ এবং কোন ব্যক্তি সেই সময়ে আমাদের জাতীয় সুরক্ষা সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করেছিল।
সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে ২৬/১১ হামলার সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। সেনাবাহিনী পরিকল্পনা করেছিল যে পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট এবং সিদ্ধান্তমূলক হামলা চালানো হবে। কিন্তু চিদম্বরমের মতে, অন্য কোনো দেশের চাপের কারণে এই পদক্ষেপ স্থগিত করা হয়েছিল। মোদী বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত কেবল সুরক্ষার দিক থেকেই উদ্বেগজনক নয়, বরং এটি দেখায় যে তৎকালীন সরকার জাতীয় সুরক্ষা এবং দেশবাসীর অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল ছিল না।
তিনি আরও বলেছেন যে সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি এবং দেশবাসীর দাবিকে উপেক্ষা করে কংগ্রেস এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা সন্ত্রাসীদের এই বার্তা দিয়েছে যে ভারত সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বল। মোদী বলেছেন যে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কেবল তৎকালীন সময়েই নয়, দীর্ঘ সময়ের জন্য জাতীয় সুরক্ষার উপর পড়েছিল।
জাতীয় সুরক্ষায় বিদেশী চাপের প্রভাব
মোদী আরও বলেছেন যে যদি বিদেশের চাপ এত সহজে ভারতের সুরক্ষা সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে এটি দেশের সার্বভৌমত্ব (sovereignty) এবং জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার উপর প্রশ্ন তোলে। তিনি কংগ্রেসের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন যে কে এবং কেন সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের উপর হামলা চালানো থেকে বিরত রেখেছিল। মোদী বলেছেন যে দেশের জানা উচিত জাতীয় সুরক্ষার বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ কখন এবং কীভাবে হয়েছিল।
মোদী এও জানিয়েছেন যে ২৬/১১ এর হামলাগুলি কেবল মুম্বাই নয়, সমগ্র দেশে ভয় ও ক্ষোভ ছড়ানোর একটি প্রচেষ্টা ছিল। তিনি বলেছেন যে দেশবাসীর অনুভূতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দমন করা একটি গুরুতর ভুল ছিল। এই হামলায় অনেক নিরীহ নাগরিকের প্রাণ গিয়েছিল এবং দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি হয়েছিল।