গাট হেলথ ঠিক রাখাই এখন নতুন মন্ত্র : ফাস্ট লাইফে পেটের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা, হজমে সমস্যা এমনকি ফ্যাটি লিভারের মতো রোগেও ভুগছেন অনেকে। চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি হল গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ-এর গবেষণা বলছে—সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললেই গাট হেলথ উন্নত হয়, যার প্রভাব পড়ে লিভার, ইমিউন সিস্টেম এমনকি মানসিক সুস্থতার ওপরও।

কী এই ৩০-৩০-৩ নিয়ম? চিকিৎসকের পরামর্শে ভাইরাল পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে দিনে তিনটি অভ্যাস জরুরি—
সকালে প্রাতরাশে অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন,
সারাদিনে প্রায় ৩০ গ্রাম ফাইবার,
আর দিনে অন্তত ৩টি প্রোবায়োটিকস খাবার।
এই তিন নিয়ম মেনে চললেই অ্যান্টাসিড বা হজমের ওষুধের উপর নির্ভরতা কমবে।

সকালের প্রোটিনেই মিলবে দিনের শক্তি ও সঠিক হজমশক্তি
ডায়াটেশিয়ানদের মতে, সকালের খাবারে প্রোটিন থাকলে শরীরের মেটাবলিজম হার উন্নত হয় এবং এনার্জি ব্যালান্স বজায় থাকে। প্রোটিন ‘ঘ্রেলিন’ নামের হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ঘন ঘন খিদে পাওয়া বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমে। এছাড়া, প্রোটিন শরীরে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা অন্ত্রের প্রাচীর মেরামত করে ‘লিকি গাট’ বা অন্ত্রক্ষয়ের ঝুঁকি রোধ করে।
ফাইবার: পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও টক্সিন জমাটের শত্রু
দিনভর পর্যাপ্ত ফাইবার খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, হজমের গণ্ডগোল হয় না এবং পেট ফাঁপার সমস্যা কমে। অদ্রবণীয় ফাইবার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত জলপান ফাইবারের কার্যকারিতা আরও বাড়ায়। চিকিৎসকদের মতে, ফাইবার রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

প্রোবায়োটিকস: অন্ত্রের প্রিয় বন্ধু, রোগপ্রতিরোধের সাথী
প্রোবায়োটিকস হল এমন উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখে ও হজমে সাহায্য করে। কিমচি, কেফির, কম্বুচা বা দইয়ের মতো খাবারে এই ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোবায়োটিকস যদি ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সঙ্গে খাওয়া হয়, তা অন্ত্রে সহজে পৌঁছে উপকারিতা দ্বিগুণ করে। প্রোবায়োটিক খাওয়ার সেরা সময় ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ।
লিভারও থাকবে সুস্থ, বাড়বে বিপাকক্রিয়ার গতি
গবেষণা বলছে, গাট হেলথ ভালো থাকলে লিভারও কার্যকরভাবে কাজ করে। লিভার শরীরের ডিটক্স ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, তাই গাটে ভারসাম্য রক্ষা করা মানে লিভারকে চাপমুক্ত রাখা। ফলে বিপাকক্রিয়ার হার বাড়ে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরে টক্সিন জমাট বাঁধে না।

চিকিৎসকদের মতে, “গাট হেলথ ঠিক রাখার জন্য দামি ওষুধ নয়, দরকার নিয়মিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস।” তাই প্রতিদিনের জীবনে ৩০-৩০-৩ নিয়ম মেনে চললেই গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেটের অস্বস্তি থেকে মুক্তি মিলবে সহজেই। এই সামান্য পরিবর্তনই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনের আসল চাবিকাঠি।













