বারবার কাশি হচ্ছে? পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংড়ার এই ৫টি ঘরোয়া প্রতিকারে মিলবে দ্রুত উপশম

বারবার কাশি হচ্ছে? পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংড়ার এই ৫টি ঘরোয়া প্রতিকারে মিলবে দ্রুত উপশম

কাশি একটি সাধারণ সমস্যা, কিন্তু যদি এটি বারবার হয়, তবে এটি কেবল অস্বস্তিকরই নয়, গলা ও শ্বাসতন্ত্রের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মৌসুমী পরিবর্তন, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ভুল খাদ্যাভ্যাস প্রায়শই কাশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

স্বাস্থ্য টিপস: যদি আপনার প্রতি দ্বিতীয় দিন কাশির সমস্যা থাকে, যা গলায় ব্যথা এবং জ্বালা সৃষ্টি করে, তবে এই তথ্যটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই নিবন্ধে আমরা কিছু ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব, যা অল্প সময়ের মধ্যে কাশির লক্ষণ কমিয়ে আপনাকে আরাম দিতে পারে। সুপরিচিত পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংড়া তাঁর একটি ভিডিওতে বলেছেন যে বারবার হওয়া শুকনো বা ভেজা কাশি প্রায়শই শ্বাসনালী সংকীর্ণ হওয়ার কারণে হয়। এছাড়াও, গলায় জ্বালা সৃষ্টিকারী সংক্রমণ, প্রদাহ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও এর কারণ হতে পারে।

কাশির পেছনের কারণ

পুষ্টিবিদ ডিম্পল জাংড়ার মতে, বারবার কাশির প্রধান কারণ হতে পারে শ্বাসনালী (এয়ারওয়ে) সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া। এছাড়াও, গলায় জ্বালা, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত চটচটে খাবার গ্রহণও কাশির সমস্যা বাড়াতে পারে।

প্রধান কারণ

  • আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
  • দুগ্ধজাত পণ্য এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারের অতিরিক্ত সেবন
  • গলা ও শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ বা প্রদাহ
  • অ্যালার্জি এবং দূষণ

এই সমস্ত কারণের প্রতিকারের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি বেশ সহায়ক প্রমাণিত হয়।

১. ফ্রুট ফাস্ট এবং গরম জলের সাথে গোলমরিচ

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং চটচটে খাবার কাশি বাড়াতে পারে। এই সমস্যা কমাতে ২৪ ঘণ্টার ফ্রুট ফাস্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

  • কীভাবে করবেন
    • সারা দিন তাজা ফল খান এবং ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
    • ফলের রসের সাথে এক চিমটি গোলমরিচ মিশিয়ে গরম জল পান করুন।
  • উপকারিতা
    • শ্বাসনালী পরিষ্কার করে
    • ব্রঙ্কিয়াল স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
    • কফ কমাতে সাহায্য করে
    • এই পদ্ধতি গলা ও ফুসফুস পরিষ্কারের জন্য খুব কার্যকর।

২. মধু এবং আদার মিশ্রণ

মধু এবং আদা উভয়ই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণসম্পন্ন। এগুলি কাশি এবং গলার জ্বালা কমাতে অনেক সাহায্য করে।

  • কীভাবে তৈরি করবেন
    • ১ চামচ আদার পেস্ট নিন
    • ১ চামচ মধু মেশান
    • ইচ্ছা অনুযায়ী হলুদ, গোলমরিচ এবং দারচিনি গুঁড়ো যোগ করুন
  • নোট
    • গরম জলে মধু মেশাবেন না, এটি বিষাক্ত হতে পারে।
    • মিশ্রণটি কাঁচা অবস্থায় গ্রহণ করুন।
  • উপকারিতা
    • গলায় উষ্ণতা ও আরাম দেয়
    • কফ এবং সংক্রমণ কমায়
    • কাশির পুনরাবৃত্তি কমায়

৩. মেথি চা

আয়ুর্বেদে মেথিকে কফ এবং শ্লেষ্মা কমানোর জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। নিয়মিত মেথি চা সেবনে কাশি থেকে উপশম পাওয়া যায়।

  • কীভাবে তৈরি করবেন
    • ১ চা চামচ মেথি দানা নিন
    • এটি জলে ভালো করে ফোটান
    • সকালে খালি পেটে এটি সেবন করুন
  • উপকারিতা
    • কফ পরিষ্কার করে
    • কফ ভারসাম্যহীনতা এবং গলার জ্বালা কমায়
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

৪. বাদামের পেস্ট

বারবার কাশি এবং গলার খুশখুশে ভাব থেকে মুক্তি পেতে বাদামের পেস্ট অত্যন্ত কার্যকর।

  • কীভাবে তৈরি করবেন
    • সারা রাত ৫-৬টি বাদাম ভিজিয়ে রাখুন
    • সকালে এগুলি পিষে পেস্ট তৈরি করুন
    • এতে ১ চামচ মাখন (প্ল্যান্ট-বেসড বা ক্রুয়েলটি-ফ্রি) মেশান
    • খালি পেটে এটি সেবন করুন
  • উপকারিতা
    • কাশি এবং গলার খুশখুশে ভাব কমায়
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
    • শরীরকে শক্তি ও পুষ্টি যোগায়

৫. গোল্ডেন মিল্ক

হলুদ মেশানো দুধ, অর্থাৎ গোল্ডেন মিল্ক, শুকনো কাশি এবং গলার জ্বালার জন্য বেশ কার্যকর। ঘুমানোর আগে এটি পান করা সবচেয়ে ভালো।

  • কীভাবে তৈরি করবেন
    • ১ কাপ দুধ নিন
    • ১ চামচ হলুদ গুঁড়ো দিন
    • মধু মেশান (গরম দুধে নয়)
    • ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন
  • উপকারিতা
    • গলার শুষ্কতা কমায়
    • সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে
    • রাতে কাশির পুনরাবৃত্তি কমায়

অতিরিক্ত প্রতিকার

এই পাঁচটি ঘরোয়া প্রতিকার ছাড়াও আপনি কিছু অন্যান্য সহজ উপায়ও অবলম্বন করতে পারেন:

  • ভাপ নেওয়া: গরম জলের ভাপ নেওয়া গলা এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার করে।
  • জলের পরিমাণ বাড়ান: দিনে ৮-১০ গ্লাস জল পান করলে কফ পাতলা হয়।
  • অ্যালার্জি এড়িয়ে চলুন: ধুলো, ধোঁয়া এবং ধোঁয়াযুক্ত স্থান থেকে দূরে থাকুন।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার: এগুলি কাশি বাড়ায়।
  • আরাম ও ঘুম: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম নিন।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শ্বাসনালীর সংবেদনশীলতার কারণে অনেকের কাশি ও সর্দি হয়। এটি বিশেষত শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই সময় গরম-ঠান্ডার পার্থক্য, ধুলো, দূষণ এবং মৌসুমী সংক্রমণ কাশির সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই সময় মতো ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি।

যদি কাশি টানা ২-৩ সপ্তাহ ধরে থাকে, কফে রক্ত ​​থাকে বা জ্বরের সাথে হয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনি প্রাথমিক উপশমের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, তবে গুরুতর বা ক্রমাগত বাড়তে থাকা কাশিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

Leave a comment