অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ: ৩০ নয়, ১৫ দিন দিন

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ: ৩০ নয়, ১৫ দিন দিন

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান, সংসদ উত্তাল

লোকসভায় বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেন। বিলটি পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসদে উত্তেজনার লহর বইতে শুরু করে। বিরোধী দলের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে অধিবেশন কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই স্থগিত করতে বাধ্য হয় স্পিকার। বিকেলের দিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সংসদীয় উত্তেজনা ও বিরোধীদের প্রতিবাদ

বিরোধী দলের বিক্ষোভের কারণে লোকসভায় বিল পেশ করার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ সময় উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য এই বিল নিয়ে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে শূন্য করা। তিনি বলেন, বিজেপির লক্ষ্য সঠিক হলে হিমন্ত বিশ্বশর্মা, শুভেন্দু অধিকারী সহ সংশ্লিষ্টদের একটি সমন পাঠানো হোক। এরা ধোঁয়া তুলসিপাতা হয়ে গেছে। দেশের মানুষ জানে এরা কী করছে।

অভিষেকের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

অভিষেকের দাবি, গত ১০ বছরে ৫৮৯২টি কেস ইডি তদন্ত করেছে, যার মধ্যে মাত্র ৮ কেসে শাস্তি হয়েছে। অর্থাৎ ৯৯% কেস রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা আছে, এর মধ্যে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এটি কেন্দ্রেরই সংসদে দেওয়া পরিসংখ্যান।” এই তথ্য দিয়ে তিনি কেন্দ্রের নীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন।

বিরোধী দলের প্রশ্নবিদ্ধ চুক্তি ও সমালোচনা

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণাত্মক প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ‘ওরা গায়ের জোরে সংবিধান সংশোধন করতে চায়। ভাবুন, ওদের হাতে যদি ৪০০ সাংসদ থাকত, তাহলে কী হত?’ তিনি আরও বলেন, মানুষ আজ রুখে দিয়েছে। কেন্দ্রের SIR থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা এবং নীতিগত ব্যর্থতা স্পষ্ট। এ অবস্থায় তৃণমূলকে সরব হতে হয়েছে, যার প্রভাবেই লোকসভা স্থগিত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা

অভিষেকের আক্রমণ, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০ জন মার্শাল নিয়ে কাপুরুষের মতো বিল ইন্ট্রোডিউস করেছেন। জনগণ ও সংসদীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে এই ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য। এটি সংবিধানগত সংস্কারের নামে কেন্দ্রের রাজনৈতিক লক্ষ্যকে প্রকাশ করছে।” তিনি বলেন, এই বিল বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে, আইনগত ন্যায় বা দেশের স্বার্থে নয়।

১৫ দিনের চ্যালেঞ্জ: বিরোধী দলের শর্ত

অভিষেক স্পষ্ট করেছেন, কেন্দ্র যদি প্রকৃত উদ্দেশ্য দেখাতে চায়, তাহলে ৩০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন সময় দিন। এতে বিরোধী দল বিলের পক্ষে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যা করছেন, তা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে। আদালত রাখার দরকারও নেই যদি সব স্পষ্ট থাকে।

রাজনৈতিক উত্তাপ ও গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সংসদীয় এই উত্তাপ দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল এই বিলকে কেন্দ্রের রাজনৈতিক চাল হিসেবে দেখছে। গণমাধ্যম ও জনমত তৃণমূলের অবস্থানকে সমর্থন করছে এবং অভিযোগ করছে, কেন্দ্র আইন প্রয়োগের নামে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।

ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব

সংসদে বিল পেশ ও বিরোধী দলের চ্যালেঞ্জ আগামী রাজনৈতিক নাটকে বড় প্রভাব ফেলবে। অভিষেকের এই চ্যালেঞ্জ শুধু সংবিধান সংশোধনী বিলকে নয়, কেন্দ্রের নীতিগত দিকও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৫ দিনের শর্ত, সরব বিরোধী অবস্থান এবং লোকসভা স্থগিত হওয়ার ঘটনা আগামী লোকসভা নির্বাচন ও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার হতে পারে।

Leave a comment