রাতের ঘুম কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে

রাতের ঘুম কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে

কাজের চাপে অনেকেই রাতের ঘুম ত্যাগ করছেন। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ঘুম কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম ঠিক রাখতে, শরীরের সঠিক রিদম বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে।

শারীরিক ও মানসিক প্রভাব

রাতের ঘুম কমে গেলে শুধু শরীরই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হয়। ঘুমের অভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হৃদস্পন্দন অস্থির হয় এবং রক্তনালিতে প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ঘুম না হলে স্ট্রেস হরমোন কার্টিসল বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার দিকে ঠেলে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের পর্যাপ্ত ঘুম হারানো মানে শুধু বিশ্রামের অভাব নয়, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য হুমকি। ঘুম কমে গেলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়, কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে হার্ট অ্যাটাক বা অ্যারিদমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ঘুম ও কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য

শারীরবৃত্তীয় সঠিক ঘুম হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত জরুরি। গবেষণা অনুযায়ী, যারা প্রতিদিন ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা ২০–৩০% বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের সময় হৃদপিণ্ডের হার ধীরে ধীরে কমে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তনালীতে প্রদাহ কমে। ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।

রাত জাগা ও কাজের চাপের প্রভাব

আজকের দ্রুতগামী জীবনধারায় অনেকেই কাজের চাপে রাতে ঘুম কমিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাত জাগা ও অতিরিক্ত কাজের চাপ একত্রিত হলে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা সরাসরি হৃদপিণ্ডকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃৎপিণ্ডের সুস্থতাকে হুমকির মুখে ফেলে।

ঘুমের অভাব ও জীবনধারা

শুধু ঘুমের ঘাটতি নয়, অনিয়মিত জীবনধারাও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম একত্রিত হলে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য বজায় থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, রাতে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে মেটাবলিক হারমোনগুলো অস্থিতিশীল হয় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

কীভাবে ঘুম ঠিক রাখা যায়

ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘুমের রুটিন ঠিক রাখতে কিছু নিয়ম মানা জরুরি:

১. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া।

২. ঘুমের আগে মোবাইল বা টিভি ব্যবহার কমানো।

৩. হালকা খাবার খাওয়া, বিশেষ করে রাতের খাবার সঠিক সময়ে নেওয়া।

৪. ধূমপান, কফি বা চা রাতে না খাওয়া।

৫. ধ্যান বা হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো।

ঘুমের অভাবের সতর্কবার্তা

চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, ঘুম কম হলে শরীর ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংকেত দেয়। সকালে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, হঠাৎ রক্তচাপ ওঠা, হৃদস্পন্দনের অস্থিরতা—এসবই হৃৎপিণ্ডের সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে। তাই সময়মতো ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সারসংক্ষেপ

রাতের ঘুম কমিয়ে কাজ করা আধুনিক জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অভিজ্ঞ চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ এবং ফিটনেস প্রশিক্ষক সবাই একমত যে, পর্যাপ্ত ঘুমই হৃদরোগ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থেকে রক্ষা করে। ৭–৮ ঘণ্টার ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম মিলিয়ে হৃদপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।

Leave a comment